সিগারেটের সূত্র ধরে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

25

ডার্বি সিগারেটেরের সূত্র ধরে ঢাকার আশুলিয়ায় চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস বিমলচন্দ্র হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি মো. হাফেজকে (৪০) আশুলিযার জিরানী বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে, ২২ জুন আসামি মো. হাফেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার (২৫ জুন) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছে তদন্ত সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, ভিকটিম বিমল চন্দ্র মন্ডল (৫৫) সপরিবারে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ভিকটিম বিমল চন্দ্র বাসায় অবস্থান করে এবং জীবিকার তাগিয়ে তার স্ত্রী ও কন্যা গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। গত ১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের ন্যায় ভিকটিম বিমলের স্ত্রী ও কন্যা কাজের তাগিদে গার্মেন্টসে চলে যায়। বিমল চন্দ্র একাই বাসায় ছিলেন। ডিউটি শেষে বিকেলে বিমলের মেয়ে পূর্ণিমা রানী মন্ডল বাসায় গিয়ে তার বাবাকে কাপড় কাটার কেচি মুখে ঢোকানো অবস্থায় দেখতে পান। তার চিৎকার-চেঁচামেতিতে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তখন পূর্ণিমা বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানান।

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামিরা গত ১৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে যেকোনো সময় বিমল চন্দ্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী পারুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। মামলা নং-৪৪। আশুলিয়া থানা পুলিশ ১৭ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে। ৪ জুন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

কুদরত-ই-খুদা বলেন, তদন্তভার গ্রহণ করার ২০ দিনের মধ্যে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়। এই হত্যার ঘটনার অনুমান ছয় মাস আগে বিমল চন্দ্র মন্ডল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যার ঘটনার দিন তার বাসায় ডার্বি সিগারেটের দুটির অবশিষ্ট অংশ পাওয়া যায়। আর এই সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্ত অগ্রসর হতে থাকে এবং বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়। তার মধ্যে হাফেজকে সন্দেহের তালিকায় ১ নম্বরে রেখে তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু হয়।

তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই ঢাকার তদন্ত টিম তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে হাফেজকে গ্রেপ্তার করে।

পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিম ও আসামি হাফেজের স্ত্রী একই গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। এই সুবাদে এবং একই এলাকায় পাশাপাশি বসবাস করায় ভিকটিমের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি ভিকটিমের বাসায় যান। ওই বাসার লোকজন সবাই গার্মেন্টসে চলে যাওয়ায় বাসা ফাঁকা ছিল। আসামি হাফেজ ও ভিকটিম বিমল চন্দ্র একসঙ্গে টিভি দেখেন এবং খাওয়া-দাওয়া করেন। পরে আসামি বিমলকে দিয়ে ডার্বি সিগারেট নিয়ে আসার জন্য বাসার নিচে দোকানে পাঠান।

ওই সময় আসামি হাফেজ ভিকটিমের বউয়ের অলংকার/গহনা ও টাকা পয়সা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। ভিকটিম সিগারেট নিয়ে বাসায় চলে এসে দেখেন, হাফেজ ঘর অগোছালো করে কী যেন খোঁজাখুঁজি করছেন। চুরির বিষয়টি ভিকটিম দেখে ফেলায় আসামি হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কাঁচি দিয়ে প্রথমে ভিকটিমের গলায় ডান পাশে পোঁচ দেন এবং পরে ভিকটিমের মুখে ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাসা থেকে একজোড়া স্বর্ণের বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ আলমারিতে থাকা নগদ নয় হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

পিবিআই জানায়, মূলত আসামি হাফেজ বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতেই ভিকটিম বিমল চন্দ্রকে নৃসংসভাবে হত্যা করে নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান।

আসামি হাফেজকে আদালতে তোলা হবে এবং তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হবে বলে জানান পিবিআিই কর্মকর্তা।