পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারায় ১৪ বছরেরও অধিক সময় ধরে ভাত খান না কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরের কৃষক ইনু মিয়া (৭৬) নামের এক বিএনপি সমর্থক। শুধু কলা, রুটি, আর শুকনো খাবার খেয়েই কাটিয়ে দিলেন ১৪ বছরেরও অধিক সময়।
বিএনপি ক্ষমতায় না এলে এবং কুলিয়ারচর-ভৈরব আসনে বিএনপি প্রার্থী শরীফুল আলম এমপি না হলে তিনি কোন দিন ভাত স্পর্শ করবেন না বলে জানান ইনু মিয়ার পরিবারসহ এলাকাবাসী।
ইনু মিয়া উপজেলার রামদী ইউনিয়নের পচ্চিম জগৎ চর গ্রামের মৃত সুলায়মান মিয়ার ছেলে। তিনি ২ ছেলে ১ মেয়ের জনক।
সরেজমিনে জানা যায়, কুলিয়ারচর উপজেলার জগৎ চর গ্রামের ইনু মিয়া এক সময় কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে তিনি বয়সের ভারে লাঠি ভর করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেন।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সে বিএনপির একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে নিবেদিত প্রাণ। বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ইনু মিয়া আওয়ামী লীগের কর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন। তারপর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যতদিন বিএনপি ক্ষমতায় না আসবে এবং শরিফুল আলম এমপি না হবে ততদিন সে ভাত খাবেন না। তার এই প্রতিজ্ঞাকে আরও দৃঢ় করে তোলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে।
ইনু মিয়া বিএনপির পক্ষে ভোট দিতে গেলে তাকে লাইন থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয় আওয়ামী লীগের লোকজন। তারপর থেকেই ভাত না খেয়ে একে একে পেরিয়ে গেছে তার ১৪টি বছর।
পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান, এমনকি ঈদের দিনেও সে ভাত খান না। গত ১৪ বছরের মধ্যে পরিবার ও স্বজনরা নানাভাবে চেষ্টা করেও তাকে ভাত খাওয়াতে পারেনি। তার একই কথা যতদিন বিএনপি ক্ষমতায় না আসবে ততদিন সে ভাত স্পর্শ করবেন না। তার এমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা পালন দেখতে এবং জানতে প্রায়ই লোকজন এসে তার বাড়িতে ভিড় জমায়।
ইনু মিয়া বলেন, আমি ভোট দিতে গেলে আমাকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন বের করে দিয়েছে। সেই থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যতদিন না বিএনপি ক্ষমতায় না আসে আর শরীফুল আলম এমপি না হয়, ততদিন পর্যন্ত আমি ভাত খাবো না। আমি ভাত ছাড়া নানাবিধ খাবার খেয়েই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি।
ইনু মিয়ার স্ত্রী জানান, ঈদ কিংবা কোন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের দিনও তাকে আমরা একমুঠো ভাত খাওয়াতে পারিনি। তার একই কথা ভাত না খেয়ে মরে যাব তাও বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত আমি ভাত খাবো না।
এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, দলের জন্য এমন নিবেদিত প্রাণ তা ইনু মিয়াকে না দেখলে বুঝা যায় না। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন দলের প্রতি ভালবাসা আর ঘৃণার ব্যবধান।
রামদী ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি হাজি মো: মজনু মিয়া বলেন, ইনু মিয়া বিএনপির কোন নেতা বা কর্মী নয়। তিনি পেশায় একজন কৃষক ও বিএনপির সমর্থক। বিএনপি ও শরীফুল আলমকে মন থেকে ভালবাসে। আওয়ামী লীগের লোকজন দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ায় দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভাত না খেয়ে এর প্রতিবাদ জানায়।
কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো: শরীফুল আলমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি দলকে ভালবেসে এত বড় ত্যাগ স্বীকার করতে পারে এমন ব্যক্তির পাশে থাকা আমাদের দরকার। অজপাড়াগায়ের একজন বয়োবৃদ্ধের এটা একটা প্রতীকী প্রতিবাদ। তার যেকোন প্রয়োজনে আমরা পাশে থাকবো। ইনু মিয়ার এই ত্যাগকে আমরা সম্মান জানাই। তার এই দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আলোচনা করব।