সম্রাট আকবর
গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী মূলত প্রশাসন থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে দেশ পরিচালনা করছে। প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের লোক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তখন থেকেই মনস্তাত্তিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। এরপর বিএনপি-জামায়াতসহ সব দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলেও ঘোষণা আসে। তবে এবার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে দল দু’টির দ্বন্দ্ব প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রকাশ্যে জামায়াতকে আক্রমণ করেছেন। এর জবাবে জামায়াতে ইসলামীও রিজভীসহ বিএনপিকে একহাত নিয়েছেন।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রিজভী বলেন: একাত্তরের বিরোধিতাকারীরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে। ৫ আগস্টের আগে ব্যাংক লুট করেছে আওয়ামী লীগ, আর ৫ আগস্টের পর ব্যাংক দখল করছে একটি ইসলামী দল।
তিনি বলেন: শেখ হাসিনার আমলে এস আলম দখল করেছে, আর এখন তাদের উত্তরসূরী হয়ে ব্যাংক দখল করেছে অনেকে। বড় বড় কথা বলে বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছে। পাড়া-মহল্লায় টার্মিনাল দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানান কিছু দখলে করেছে একটি দল। ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। কারা পায়ের রগ কাটে তাদের চেনে জনগণ। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে একাত্তরের বিরোধিতাকারীরা। শুধু পার্শ্ববর্তী দেশই অপপ্রচার করছে না, দেশের দুই-একটি রাজনৈতিক দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়।
রুহুল কবির রিজভীর এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এক বিবৃতিতে বলেন: বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে ‘ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, তার এ জাতীয় বক্তব্য বিগত কয়েক দশক যাবৎ প্রচার করা হচ্ছে। রগ কাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১ এর বিরোধিতা এ সব বক্তব্য জনগণ বহু পূর্বেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। জামায়াত রগকাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনো করেনি। তিনি জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে ‘ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না’ তার এই বক্তব্য চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।
বিবৃতিতে দলটি জানায়: জামায়াত কখনো মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি। তিনি অবশ্যই অবগত আছেন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্ন মতের লোকদের সাথে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল তা কী জাতির সাথে মোনাফেকি নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দ পতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি। তিনি ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করতে চায় জামায়াত’ মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে জনগণ বিস্মিত। ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে জামায়াতের প্রতি অভিযোগ উত্থাপনের আগে তার আত্ম-পর্যালোচনা করা উচিত। কারা দলীয় টিম নিয়ে ভারত সফর করে ভারতের সাথে সখ্যতা করার চেষ্টা করেছেন, তা জনগণ খুব ভাল করেই জানেন।
বিএনপি এবং জামায়াতকে আওয়ামী লীগ একইসাথে দীর্ঘ দেড় যুগ নির্যাতন করলেও এখন ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নিজেদের মধ্যে ফাটল ধরানো কতটা যুক্তিযুক্ত, সে বিষয়েও বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলছেন।