জেলা প্রতিনিধি, ভোলা: ভোলায় স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামীকে সালিসে বেঁধে রাখার অপমান সইতে না পেরে মো. নিজাম উদ্দিন (৪২) নামে এক অটোরিকশাচালক বিষপানে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাতে তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
রবিবার ৯ এপ্রিল দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ভোলা সদর থানার ওসি মো. শাহীন ফকির বিষপানে আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিজাম সদর উপজেলার ২নং পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সি গ্রামের মশু মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মো. নিরব বাদী হয়ে ভোলা সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন।
নিজামের ভাই, ভাতিজা ও মা জানান, নিজাম ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলে আসছে। বিষয়টি নিয়ে তার স্ত্রী জান্নাত বেগম স্থানীয় (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটনের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মো. ইউছুফকে দিয়ে কালাম মেম্বারের পোল সংলগ্ন চেয়ারম্যানের অফিসে ডেকে নেয়। পরে চেয়ারম্যান মিজানের স্ত্রী-সন্তান ও শতশত মানুষের উপস্থিতিতে গ্রাম পুলিশকে হুকুম করে নিজামকে বেঁধে রাখতে। কিন্তু গ্রাম পুলিশ তাকে বেঁধে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্থানীয় ইয়াছিন আরাফাত নামে এক যুবক তাকে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এর কিছুক্ষণ পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই অপমান সইতে না পেরে সন্ধ্যায় নিজ ঘরে বিষপান করে নিজাম। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কিছুক্ষণ পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ সালিসি বৈঠকে নিজামকে বেঁধে রাখায় অপমান অপদস্ত হয়ে বাড়িতে গিয়ে সে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছে। তাঁরা এ ঘটনার সঠিক বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনায় নিজামের পরিবার আইনি প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান।
তবে ২নং পূর্ব ইলিশা ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন ছোটন জানান, নিজাম ও তার স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক ঝগড়া চলছিল। সে মাদকসেবন করত। ঠিকমতো সংসারে টাকা পয়সা দিত না। বিষয়টি তার স্ত্রী অভিযোগ করলে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নিজাম চেয়ারম্যানের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলেন। সালিসি বৈঠকে উশৃংখলতা করেন। তার আচরণ ছিল অসৌজন্যমূলক। তাই তিনি গ্রাম পুলিশকে হুকুম করেছিলেন তাকে বেঁধে রাখতে। কিন্তু গ্রাম পুলিশ তাকে বেঁধে রাখেনি। তবে ইয়াছিন আরাফাত নামে এক যুবক তাকে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে বলে তিনি লোকমুখে শুনেছেন। তখন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
তিনি আরও জানান, নিজামের ব্যবহার ছিল অসৌজন্যমূলক। তার স্ত্রী বলেছিল তাকে থাপ্পড়-চোপড় দিয়ে শাষণ করে তার সঙ্গে মিলমিশ করে দিতে। কিন্তু চেয়ারম্যান তার গায়ে হাত দেইনি। তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের কাছ থেকে সালিসি বৈঠকে জানতে চাওয়া হয়েছে তার মা-বাবার মধ্যে যে বিরোধ ছিল তাতে দোষী কে? তখন ছেলে তার বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। চেয়ারম্যানের ধারণা, ছেলে বাবাকে দোষী সাবস্ত করায় এ ক্ষোভে নিজাম বাড়িতে গিয়ে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছে। নিজামের আত্মহত্যার খবর পেয়ে রাতেই চেয়ারম্যান হাসপাতালে তার লাশ দেখতে গিয়েছিলেন। তার দাবি, একটি কুচক্রী মহল তাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে নিজামের আত্মহত্যার ঘটনায় তাকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। কুচক্রী মহল ঘটনাটি অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলেও চেয়ারম্যান অভিযোগে জানান।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, নিজামের আত্মহত্যার ঘটনায় তার ভাই নিরব একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। তবে নিজাম সালিসি বৈঠকে অপমান অপদস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে এবং এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পেলে পুলিশ সেটির তদন্ত করবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত