
নারী অধিকার ও নারীর সুস্বাস্থ্য সংরক্ষণে বিশেষ অবদানে স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ডা. হালিদা হানুম আখতারকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩’ এ ভূষিত করা হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ নেতৃস্থানীয় প্রজনন স্বাস্থ্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক ছিলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম পরিবার পরিকল্পনা সংস্থার মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডা. হালিদা হানুম রংপুরে একটি তৃণমূল স্তরের সংস্থা তৈরি করেছেন, যা নারীদের সুস্বাস্থ্য ও মাতৃত্ব বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়। তার গবেষণার মূল ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে গর্ভনিরোধক কার্যকারিতা, প্রজনন স্বাস্থ্য চাহিদা, পরিষেবা, মাসিক নিয়ন্ত্রণ গর্ভপাত, মাতৃত্বকালীন অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার রোধ। এসকল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. হালিদা হানুম আখতার ২০০৬ সালে একমাত্র বাংলাদেশী নারী হিসেবে একক ক্যাটাগরিতে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনস পপুলেশন অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছেন।
এছাড়াও তিনি বহু আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সম্মাননা অর্জন করেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডা. হালিদাকে বাংলা একাডেমি সাম্মানিক ফেলোশীপ ২০২৩ প্রদান করেছে।
ডা. হালিদা হানুম আখতার ১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ডা. হালিদা আলহাজ্ব মো: হাবিবুদ্দিন এবং ডা. হুমায়রা খানমের কন্যা। ডা. হুমায়রা খানম রংপুরে ১৯৬০ সাল থেকে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্বনামধন্য ছিলেন। ডা. হালিদা একজন প্রজনন স্বাস্থ্য এপিডেমিওলজিস্ট। প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে তার ৪০ বছরেরও বেশি অভিজ্ঞতা এবং দেশে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁর কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পর ডা. হালিদা হানুম আখতার জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে জনস্বাস্থ্যে মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সিডিসি- সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, আটলান্টা, জর্জিয়া থেকে রকাফেলার ফেলো হিসেবে এপিডেমিক ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস-ইআইএস প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। নারী স্বাস্থ্য বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তার নেতৃত্বের ভূমিকার মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা নারীদের ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ১৬ বি (বর্তমান ঠিকানা) ‘সাদা বাহার’-এর সেবা সদন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের একজন আদর্শ দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক অত্যাচারিত গর্ভবর্তী নারীদের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা, গর্ভপাত, ডেলিভারি বিষয়ে শারীরিক সুচিকিৎসা ও মানসিক উন্নয়নসহ পুনর্বাসন ব্যবস্থাপনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, রংপুরের একজন উপদেষ্টা।