বিএভিএস হাসপাতালে স্বৈরাচারের দোসরকে বাঁচাতে মরিয়া কর্তৃপক্ষ

রাজধানীর মিরপুরে সরকার প্রশাসিত বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর ভলান্টারি স্টেরিলাইজেশন (বিএভিএস) হাসপাতালে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার দায়ে বরখাস্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক নজরুল ইসলামের হেফাজত থেকে বিদেশী পিস্তল, চাইনিজ কুড়ালসহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নজরুল ইসলামের শাস্তি দাবিতে মিরপুর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

তারা অভিযোগ করে বলেন, বিএভিএস প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অর্থ) নজরুল ইসলাম গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতি, অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।

নজরুল ইসলামের স্ত্রী গাজীপুর মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আয়েশা আক্তার আশা, শ্যালক যুবলীগ নেতা কুখ্যাত সন্ত্রাসী ইসমাইল (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের সহচর) ও ছেলে ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল ইসলাম অনিক উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের লিডার।

তারা বলেন, পরিবার ও নিজের আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সড়া জ্ঞান করতেন না নজরুল ইসলাম। বিএভিএস হাসপাতালেও প্রতিষ্ঠা করেছেন একনায়কতন্ত্র। স্বেচ্ছাচাড়িতা ও লুটপাটের মাধ্যমে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনভাতা আত্মসাৎসহ নানাভাবে গড়েছেন শত শত কোটি টাকা।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, ২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচার ও দুর্নীতিবাজরা বিদায় নিলেও বিএভিএস স্বৈরাচার মুক্ত হয়নি। বরং প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসকও মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মহা-দুর্নীতিবাজ নজরুল ইসলামকে বাঁচাতে মরিয়া।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, নজরুল ইসলাম তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্র্ভূতভাবে বিএভিএস এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি তহবিলের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় হতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা অপারেশন প্ল্যান হিসেবে অর্থ ছাড় করা হলেও শাখা অফিসের কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে রেখেছেন অন্তত ৮ মাস ধরে। অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে নিজের আত্মীয় স্বজন ও বিভিন্ন শাখা অফিসে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জনকে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কামিয়েছেন কোটি টাকা। এছাড়াও ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান থেকে লুটে নিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাহাড়সম অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারিতে নজরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হলেও তৎকালীন প্রশাসক আব্দুল ওয়াদুদ তাকে বিশেষ সহানুভূতি দেখিয়ে অফিস করার নির্দেশনা দেন। এমনকি অভিযোগ উঠেছে, গত ৭ জানুয়ারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রবল আপত্তি ও বাধার মুখেও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে নজরুল ইসলামকে চেয়ারে বসতে প্রচ্ছন্ন সহায়তা করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রশাসক আব্দুল ওয়াদুদ। ঘটনার পর আব্দুল ওয়াদুদকে সরিয়ে উপসচিব মাজহারুল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। তবে তিনিও নজরুল ইসলামকে বহাল করতে স্বচেষ্ট বলে অভিযোগ কর্মকর্তা কর্মচারীদের। মাজহারুল ইসলাম যোগদান করেই নজরুল ইসলামের বিরাগভাজন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করেন এবং ৭ জনকে শোকজ করেন।

বিএভিএস মেটারনিটি হাসপাতালে শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধে ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত নজরুল ইসলামের মোবাইলফোনে একাধিকবার ফোন করে, মেসেজ দিয়েও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।