শেখ হাসিনাকে দীর্ঘমেয়াদে আশ্রয় দিলে নষ্ট হবে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক?

66

গণঅভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া গণহত্যাকারী স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দীর্ঘমেয়াদে আশ্রয় দিলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যদিও বলছেন, শেখ হাসিনার বিষয়ে ভারতের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হবে না- তবে এটাকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বলছেন বিশ্লেষকরা।

শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর ভারত সরকারকে তার বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের বিষয়ে অনুরোধ করা হবে। এই ধরনের পরিস্থিতি নয়াদিল্লির জন্য কূটনৈতিকভাবে ‘বিব্রতকর পরিস্থিতি’ তৈরি করবে। ভারত ভালো করেই এটি জানে। তবে আমি নিশ্চিত ভারত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টিকে বিবেচনা করবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এমনিতেই ভারত বিরোধিতা রয়েছে। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দমন-পীড়নে তা আরও প্রবল হয়েছে। এখন শেখ হাসিনাকে দ্ল্লিী আশ্রয় দিয়ে প্রকাশ্যে তাদের পক্ষ নেওয়ায় ভারত বিদ্বেষ প্রবল আকার ধারণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ। জনমতের জন্য হলেও ভারতের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক ভালো যাবে না। সেজন্য তারা শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার চাপ প্রয়োগ করবে নয়াদিল্লীর ওপর। নয়াদিল্লী এতে রাজি না হলে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হবে।

‌‘শেখ হাসিনা নিজ দেশে গণহত্যা চালিয়েছেন। এমন একজন গণহত্যাকারীকে ভারত কেন আশ্রয় দিবে? এর মানে তারাও গণহত্যার অংশীদার বা সমর্থক। এমন প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এ প্রশ্ন অযৌক্তিকও নয়। ভারতের বিভিন্ন মানুষের মধ্যেও এ প্রশ্ন উঠছে। শেখ হাসিনা যেমন সবকিছু নিজের কব্জায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গণহারে মানুষ খুন করতে দ্বিধাবোধ করেননি, ঠিক তেমনভাবেই কি বিজেপি ভারতকে কব্জা করে রেখেছে? ভারতীয়রা এখন এসব ভাবতে শুরু করেছেন। মূলকথা হলো- শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীনরা উভয়সংকটে পড়বেন’, বলছিলেন একজন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। সেখানে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপ কোনভাবেই কাম্য নয়। ভারতের উচিৎ নিজ দেশের দিকে নজর দেওয়া। সেখানকার মৌমিতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কোনো একটি দেশ যদি আঞ্চলিক পরাশক্তি হতে চায়, তাহলে প্রথম কাজ হলো প্রতিবেশিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। ভারত এক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

অন্যদিকে গণআন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আইনি সঙ্কট বাড়তে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার পাহাড় জমতে শুরু করেছে। হত্যা, অপহরণ-সহ একের পর এক মামলা দায়ের হচ্ছে। এই অবস্থায় হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান যে কঠোর, সেই বার্তাই পাওয়া যাচ্ছে।