নিষেধাজ্ঞায় ‘তেঁতুলিয়া’ নদীতে যেন চোর-পুলিশ খেলা

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: মৎস্য সম্পদ বাড়াতে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের অভয়াশ্রমে মা ইলিশ নিধন করছেন জেলেরা। অভিযোগ উঠেছে, নৌ পুলিশকে ম্যানেজ করে ইলিশ নিধানের উৎসবে মেতে উঠেছে কিছু অসাধু জেলেরা। এছাড়াও উৎকোচের বিনিময়ে আটক মাছ ধরার ট্রলার ছেড়ে দেওয়া ও জব্দকৃত জাল না পুড়িয়ে জেলেদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে নৌ পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌ পুলিশ।

উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্র মতে, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, বিনিময় ও ক্রয়- বিক্রিয়ে গত ১২ অক্টোবর থেকে ২নভেম্বর পর্যন্ত ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইলিশ অভয়াশ্রম তেঁতুলিয় নদীতে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও নৌ পুলিশ সদস্যরা কঠোরভাবে অভিযান করার কথা থাকলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মা ইলিশ সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই ঢিলেঢালা ভাবে অভিযান পরিচালনা করছেন প্রশাসন। এতে সুযোগ নিচ্ছেন একদল অসাধু জেলেরা। চলছে মা ইলিশ নিধনের মহোৎসব।

সরেমজিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেঁতুলিয়া নদীর চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বাতির খাল, খানকা মসজিদ, কালাইয়ার চর ফেডারেশন, শৌলা, চরকালাইয়া, নাজিরপুরের নিমদী, ধানদী, কেশবপুরের মমিনপুর, কালামিয়ার বাজার, ধুলিয়ার মঠবাড়িয়া ও লঞ্চঘাট এলাকায় অবাধে মা ইলিশ নিধন করছেন জেলেরা। এসব মাছ মৌসুমি মাছ ব্যবসায়ীরা নদীর পাড় থেকে পাইকারি মূল্যে কিনে নিয়ে কৌশলে খুচরা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।

অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নৌ পুলিশ ও মৎস্য বিভাগ নদীতে অভিযান পরিচালনা করছেন। তবে অভিযানে নামের খবর দ্রুত সমেয়র মধ্যে জেলেদের কাছে পৌঁছে যায়। এতে অভিযান চালাকালে নদী জেলে শূন্য হয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলেদের একটি সূত্র জানায়, নৌ পুলিশ একটি ট্রলার ও একটি স্পীড বোর্ড নিয়ে নদীতে রুটিন করে অভিযান চালায়। ট্রলার ও স্পীড বোর্ডের চালকের মাধ্যমে নদীতে অভিযানে নামার খবর নিদিষ্ট জেলেদের কাছে চলে যায়। এতে জেলেরা আগাম সতর্ক হয়ে যান। এজন্য আলগীর ও নান্নুকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন জেলেরা। যার ভাগ নৌ পুলিশও পান। এছাড়াও অভিযানে আটক ট্রলার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া ও জব্দকৃত জাল না পুড়িয়ে বিক্রি করারও অভিযোগ করেছেন জেলেরা।

জেলেদের অপর একটি সূত্র জানায়, অভিযানে আটক করা ট্রলার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান জেলেরা। এজন্য ট্রলার প্রতি দিতে হয় ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। টাকা লেনদেন হয় ট্রলার চালক আলমগীর ও নান্নুর মাধ্যমে। যা পরে চলে যায় নৌপুলিশের সদস্যদের পকেটে। এছাড়াও জব্দ করা জাল না পুড়িয়ে ওই জাল জেলেদের কাছেই কম দামে বিক্রিও করেন নৌ পুলিশ।

চন্দ্রদ্বীপের জেলে আকবর আলী মাঝি, কেশবপুরের হেমায়েত গাজীসহ একাধিক জেলে বলেন,‘ আমরা যারা প্রকৃত জেলে আছি তারা নিষেধাজ্ঞা মানি। আইন অমান্য করে নদীতে যাই না। কিন্তু কিছু মৌসুমি জেলে অধিক লাভের আশায় ইলিশ মাছ ধরে। এজন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হওয়া উচিত।

যদিও এসব অভিযোগ মানতে নাজার কালাইয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. লুৎফার রহমান। তিনি বলেন, ইলিশ রক্ষায় নৌ পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। ধরাও পড়ছেন জেলেরা। যার জন্য পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এমন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী বলেন,‘ ইলিশ রক্ষায় কয়েকটি টিম নদীতে অভিযান পরিচালনা করছে। আমিও নদীতে অভিযানে অংশ নেই। নিয়মিত জেলেদের আটক করা হচ্ছে এবং আইন অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। নৌ পুলিশ সদসরা যদিও কোনো অনিয়ম করে থাকার তার সুনিদিষ্ট প্রমাণ পেলে অব্যশই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।