বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। এই তিন মাসকে বলা ইলিশের ভরা মৌসুম। তবে এ মৌসুমে নদী সাগরে দেখা মিলেনি আশানুরূপ মাছ। বুধবার মধ্যরাত থেকে ইলিশ সংরক্ষণে শুরু হয়েছে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা। কাক্সিক্ষত ইলিশ না পাওয়ার হতাশা নিয়েই শেষ হলো মৌসুম। পরিশোধ হয়নি ঋণের টাকা, বন্ধের মধ্যে সংসার চলবে কিভাবে এনিয়ে নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পটুয়াখালীর বাউফলের হাজার হাজার জেলে।
ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নিরাপদ করতে গতকাল (বুধবার) মধ্যরাত থেকে ২২দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা কালীন সময় ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহণ, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিয়ম নিদ্ধি ঘোষণা করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা আমাণ্য করলে অর্থদণ্ড, কারাদণ্ড ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। সরকারের আইন মানতে বুধবার সকাল থেকেই নদী ও সাগরে থাকা জেলেরা হতাশা নিয়ে ঘাটে ফিরেছেন । এতে শেষ সময়ে মাছ কেনা বেচায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে মৎস্য বন্দর ও আড়ৎগুলো।
উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর জেলেরা জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ ধরা পড়ে। এ বছর ভরা মৌসুমেও নদীতে ইলিশের আকাল দেখা দেয়। জেলেদের জালে ধরা পড়েনি আশানুরূপ মাছ। মৌসুম শেষে হতাশা নিয়ে ফিরেছেন জেলেরা। এনজিও ঋণের কিস্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
অপরদিকে বঙ্গোপসাগরেও ইলিশের তেমন দেখা মেলেনি। কিছু ইলিশ দেখা মিলেও সাগর উত্তাল থাকায় সুবিধা করতে পারেনি জেলেরা। সাগরে প্রচণ্ড ঢেউ থাকায় ট্রলার নিয়ে বার বার তীরে ফিরে আসেছেন তারা।
এফবি ভাই ভাই ট্রলারের মালিক ও উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে বাসিন্দা সোহবাহান খান বলেন, ১৫জন স্টাফ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাই। এ মৌসুমে ১৪ বার জাল ফেলেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে মাছ বিক্রি করেছি ১৪লাখ টাকা। ক্ষতি হয়ে ১০ লাখ। দেনা আছি ১৩ লাখ টাকা। সামনের দিন গুলো কিভাবে চলব তা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় আছি।
চন্দ্রদ্বীপের আরেক জেলে মো. ইয়াসিন জোমাদ্দার। তিনি জানান, ১০ জন স্টাফ নিয়ে সাগরে মাছ ধরি। এবছর খচর হয়ে ১২লাখ টাকা। মাছ বিক্রি করছি ৪লাখ। এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব, কিভাবে সংসার চালাবো আর কিভাবে স্টাফরা চলবে?
কেশবপুর ইউনিয়নের মমিনপুর এলাকার আফজাল ব্যাপারী। তেঁতুলিয়া মাছ শিকার ৪সদস্যের সংসার চালান। নদীতে কাঙ্খিত মাছ না পেয়ে চোখে মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে তিনি জানান, সারা বছর ঋণ করে চলি। মৌসুমে মাছ পেয়ে তার পরিশোধ করি। আবার ঋণ করে সারা বছর চলি। এবার তো নদীতে মাছ নেই। মৌসুমও শেষ, অবরোধও শুরু। এখন ঋণ পরিশোধ করবো কিভাবে আর সংসারই বা চলবে কিভাবে। সরকার ২৫ কেজি চাল না হয় দিবে, অন্যসব বাজার পাবো কই!
কেশবপুর ইউনিয়নের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. আফজাল হোসেন গাজী বলেন, জেলেরা টাকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। এতে লস হয়ে ৭০ লাখ টাকা। যার অনেক অংশই ব্যাংক লোন। নিজে ঋণের টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকার পরেও জেলেদের কম বেশি টাকা দিয়ে সারাবছর চালিয়ে রাখতে হবে।
কালাইয়া বন্দর আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, নদী সাগরে মাছ না থাকায় মৌসুমে জেলেরা চাহিদামত মাছ আড়তে দিতে পারেনি। কোটি কোটি টাকা দানদ দিয়ে বিপাকে পড়েছেন শতশত ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম তালুকদার জানান, ইলিশের প্রজনন নিরাপদ ও ইলিশ সংরক্ষণ করতে বুধবার মধ্যরাত থেকে ২নভেম্বর পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়েছেন সরকার। এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় নদীতে মাছ ধরা যাবে না। কেউ আইন অমান্য করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এজন্য জেলেদের সচেতন করতে আমরা সচেতনাসভা, লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার ও মাইকিং করেছি। এছাড়াও আইন বাস্তবায়ন করতে মৎস্য বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্টেট নদীতে টহল দিবেন।
তিনি আরও জানান, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় বেকার জেলেদের সরকারের সহায়তার চাল বিতরণ করা হবে উপজেলার প্রায় ৬হাজার জেলেদের মধ্যে ২৫ কেজি করে ১৫০ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হবে।