বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফলে উপকূলীয় চরাঞ্চলের সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের মাঝে হাঁস মুরগি ভেড়া, খাদ্য ও ঘর বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের এক লাইভস্টক ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটরের (এলএফএফ) বিরুদ্ধে। ওই এলএফএফ কর্মীর নাম মো. মাসুম বিল্লাহ। তিনি উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নে এলএফএফ হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৫ হাজার সুবিধাভোগী মানুষের মাঝে হাঁস মুরগি ভেড়া, ঘর ও খাদ্য বিতরণ করেন। প্রতি ইউনিয়নে ৫শ মানুষ এ সুবিধাভোগ করেন। প্রকল্পের বিধি অনুযায়ী ইউপি চেয়ারমান ও মেম্বারেরা সুবিধাভোগীদের নারী-পুরুষের তালিকা করেন। সেই তালিকা ইউনিয়নের দায়িত্বরত এলএফএফ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে জমা দেওয়া। তালিকা অনুযায়ী প্রকল্পের বরাদ্দ সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণে সহায়তা করেন ইউনিয়ন ভিত্তিক এলএফএফ কর্মী।
তবে বাস্তব চিত্র একবারেই ভিন্ন। প্রকল্পে দায়িত্বরত এলএফএফ কর্মী ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। গ্রামাঞ্চলের অসহায় মানুষদের কাছ থেকে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। এমনকি প্রকল্পের বরাদ্দের খাবার, ঘর, হাস, ভেড়া বিক্রি ও লোপাটও করছেন।
উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নে প্রকল্প এলএফএফ মো. মাসুম। তিনি নিজেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিবের আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দেন। সচিবের নাম ভাঙিয়ে প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিতে মেতে ওঠেন মাসুম। প্রকল্পের শুরুতে তালিকা প্রস্তুতে চেযারম্যান-মেম্বারদের দেওয়া নাম বাদ দিয়ে টাকার বিনিয়ম নতুন নাম দেন মাসুম। ওই সময় মাসুমের বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিতও অভিযোগ করেন কেশবপুর ইউপি চেয়ারম্যান। প্রকল্পের বরাদ্দের হাঁস মুরগি ভেড়া, ঘর ও খাদ্য বিতরণেও টাকা নেন মাসুম। অনেকে সুবিধাভোগীর মাঝে বরাদ্দের হাঁস, ভেড়া ও খাদ্য বিতরণ না করে তা আত্মসাতের অভিযোগও উঠে মাসুমের বিরুদ্ধে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, কেশবপুর ইউনিয়নের ৫০০জন সুবিধাভোগীর তালিকার প্রায় ২০০ জনের নামের তালিকা করেন মাসুম। নাম প্রতি মাসুম হাতিয়ে নেন ৫শ থেকে ৫হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও প্রকল্পের হাঁস মুরগি ভেড়া, খাদ্য ও ঘর বিতরণে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ৫শ থেকে ১হাজা টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী জনপতি ১৪৩ কেজি মুরগির খাবার দেওয়ার কথা থাকলে ১০০ কেজি খাবার বিতরণ করা হয়। বাকি খাদ্য বাহিরে বিক্রি করেন মাসুম।
১১জন সুবিধাভোগীর মাঝে ৩৩টি ভেড়া ও ৫০কেজি ওজনের ২০ বস্তা খাবার বিতরণ না করে মাসুমের বাড়ির পাশে বাবুল নামের এক ব্যক্তির মজুদ করে। মাসুমের বাড়িতেও ১২বস্তা খাদ্য ও ৩৬টি হাঁসের সন্ধান মিলে। এ প্রকল্প থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এই মাসুম। মাসুম স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
উত্তর কেশবপুর গ্রামের সেলিনা বেগম ২০টি হাঁস না দিয়ে ১৮টি হাঁস দেন মাসুম। এজন্য তার কাছ থেকে নেন ২শ টাকা। আর ২বস্তা হাঁসের খাবারের জন্য নেন ৫শ টাকা।
একই ভাবে কেশবপুর গ্রামের মল্লিকডুবা গ্রামের আমেনা বেগমও তিনটি ভেড়া, একটি ঘর ও দুই বস্তা খাবার পান। এজন্য আমেনা বেগমের স্বামীর কাছ থেকে ৯শ টাকা নেন মাসুম।
কেশবপুরের জাফরাবাজ গ্রামের জায়েদা বেগম নামের এক নারীর কাছ থেকে ৫হাজার টাকার বিনিময় ২০টি মুরগি, খাবার ও ঘরের নাম দেন মাসুম। যদিও মাসুমের ভয়ে ৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন ওই নারী। তবে নামের জন্য ৫০০ টাকা দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। এছাড়াও দুই বস্তা খাবারের জন্য ৩শ টাকা নেন মাসুম।
মার্জিয়া নামের আরেক নারীর কাছ থেকে ভেড়ার নামে ৭০০টাকা নেন মাসুম।
কেশবপুর ইউনিয়নের ৬নং ইউপি সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমার ওয়ার্ড থেকে ২৫ জনের নাম তালিকা দেওয়া হয়েছিল। এলএফএফ মাসুম সেই তালিকা থেকে ১৬ জনের নাম কেটে দিয়ে টাকার বিনিময় নতুন নাম তালিকাভুক্ত করেন।
আরেক ইউপি সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমিও ২৫ জনের তালিকা দেই। মাসুম সেই তালিকা থেকে ২০ জনের নাম কেটে দিয়ে টাকা খেয়ে নতুন নাম যুক্ত করেন।
কেশবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন পিক বলেন, প্রকল্পের বরাদ্দের মালামাল ইউনিয়ন পরিষদের বসে বিতরণ করার কথা। এলএফএফ মাসুম তা না করে তার বাড়িতে বসে ৯/৬ করে বিতরণ করছেন। এছাড়াও প্রকল্পের তালিকা করার সময়েও অনিয়ম করা হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের তালিকা বাদ দিয়ে টাকার বিনিময় তালিকা করেন মাসুম। এবিষয়ে আমি ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযুক্ত মাসুম বলেন, সাবেক প্রাণিসম্পদ সচিব আমার আত্মীয়। তার কাছে ঘুরে ঘুরে এই প্রকল্প বাউফলে আনছি। কাজ করতে গেলে অনেক সময় ভুল হতেই পারে। জানায় অজানায় ভুল হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পার্থ সারথী দত্ত বলেন, উপকূলীয় চরাঞ্চলের সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দের প্রাণি, খাবার ও ঘর বিতরণে কোনো টাকা নেওয়া যাবে না। যদি কারো টাকা নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ মিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।