বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফলের দাশপাড়া ইউনিয়নের চরআলগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ চারটি পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগেই কারা নিয়োগ পাবেন তাদের নাম শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। ৩২ লাখ টাকার বিনিময় এসব পদে চারজনের চাকরি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি তুলেছেন সাধারন চাকরিপ্রার্থীরা।
চাকরি প্রত্যাশীদের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জুলাই চরআলগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সৃষ্টপদে একজন করে অফিস সহায়ক, আয়া ও নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রধান শিক্ষক। নিয়মানুযায়ী পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রাখেন। গত ২৩ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ তারিখ। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রাখায় অনেক চাকরিপ্রার্থী আবেদন করতে পারেননি। এদিকে আবেদনপত্র যাচাই-বাচাই, নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশের আগে কোনো পদে কার চাকরি হবে এমন শুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এলাকা জুড়ে।
নিরাপত্তাকর্মী পদে চাকরি প্রার্থী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রাখেন। বিশেষ মাধ্যমে খবর পেয়ে চাকরির আবেদন করি। আবেদন করার পর বিদ্যালয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানতে পারি ৩২ লাখ টাকায় চারপদে চারজনের নাম চুড়ান্ত করে ফেলেছেন প্রধান শিক্ষক। সহাকরী প্রধান শিক্ষক পদে মো. আল-আমিনের কাছ থেকে ১০ লাখ, অফিস সহায়ক পদে মো. ফায়জুলের কাছ থেকে ৯ লাখ, আয়া পদে মো. আসমা বেগমের কাছ থেকে ৭ লাখ ও নিরাপত্তা কর্মী পদে মো. কামিয়াবের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকায় এসব পদে চাকরি অলিখিতভাবে চূড়ান্ত করেন প্রধান শিক্ষক। একই অভিযোগ করে অফিস সহায়ক পদে আরেক চাকরি প্রার্থী মো. নিয়াজ খান।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গোপন রাখায় আফিস সহায়ক পদে আবেদন করতে আগ্রহী থাকার পরে আবেদন করতে পারেননি বলে অভিযোগ মো. মাহফুজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত তথ্যের জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে একাধিক গেলেও তিনিও কোনো তথ্য দেননি। যার কারনে আমিসহ অনেক প্রার্থী আবেদন করতে পারেনি। প্রধান শিক্ষক টাকার বিনিময়ে তার পছন্দের প্রার্থীদের চাকরি দিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য গোপন রেখেছেন। টাকার বিনিয়ম এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে পুনরায় স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির দাবি করছি।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের এক সহকারি শিক্ষক মাঠ পর্যায় দালাল হিসেবে কাজ করছেন। টাকার বিনিময়ে তিনি প্রার্থী সংগ্রহ করেন। কোন প্রার্থী কত টাকা দিবে তাও চুড়ান্ত করেন ওই দালাল। টাকার বিনিময় চাকরিপ্রত্যাশীরা দালালের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের কাছে বায়না টাকা দিয়েছেন। বাকি টাকা চাকরি পর দেওয়া হবে। সূত্র আরও জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া কাগজে কলমে বৈধকরতে প্রতি পদের জন্য একাধিক ভূয়া প্রার্থীও ঠিক করে রাখা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক এম. এ জলিলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মুঠোফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় সভাপতি মো. ইদ্রিস মৃধা বলেন, তিনি (প্রধান শিক্ষক) একজন দুষ্ট লোক। চারটি পদে নিয়োগে টাকা নেওয়া হয়েছে এমনটা আমিও শুনেছি। তবে টাকার বিনিময় কাউকে চাকরি পেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হবে।
বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, এমনটা সুযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।