
জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে সফরকালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশুদের তীব্র মানবিক সংকট মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের মাসিক খাদ্য তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তে (১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে) বাংলাদেশে অবস্থানরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কঠিন হুমকির মুখে পড়বে। ডব্লিউএফপি’র মতে, তহবিল সংকটের কারণে বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেকে আনার ফলে শরণার্থীদের জীবনধারণের ন্যূনতম সীমার নিচে ঠেলে দেবে, যা অপুষ্টি এবং স্বাস্থ্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
খাদ্য সহায়তা বরাদ্দের এই মারাত্মক হ্রাসের কারণে নারী ও কিশোরীরা অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মা, কিশোরী এবং শিশুরা ইতোমধ্যেই তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মৃত্যুর হার বাড়িয়ে তুলতে পারে। খাদ্য ঘাটতির চাপে পারিবারিক সহিংসতা এবং শোষণসহ জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলবে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে যুক্ত হয়েছে পর্যাপ্ত যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার (এসআরএইচআর) পরিষেবার বিঘ্নের আশঙ্কা, এতে নারী ও কিশোরীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, খাদ্য রেশন কমানোর খবরে ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গা শিবিরে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং এতে অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে নারী ও কিশোরীদের বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলবে, তারা প্রায়ই এই ধরনের অস্থিতিশীলতার সবচেয়ে বেশি শিকার হোন। উপরন্তু, আন্তর্জাতিক কমিউনিটির তহবিল ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে মানবিক সংস্থাগুলোকে শরণার্থীদের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খেতে বাধ্য করেছে।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পূর্ণ খাদ্য রেশন পুনরুদ্ধার করতে এবং নারী ও কিশোরীদের অগ্রাধিকার দিয়ে জেন্ডার-সংবেদনশীল সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরি তহবিল প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় টেকসই প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসন পরিকল্পনাসহ দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকট এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। জাতিসংঘের মহাসচিব যখন এই সংকটের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, তখন আমরা ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থীর, বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় দ্রুত এবং সহানুভূতিশীল পদক্ষেপের আহ্বান জানাই।