গো-খাদ্য এখন বাড়ন্ত রোপা আমন চারা

টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে ঠাকুরগাঁওয়ে বেশিভাগ মাঠ-ঘাট ও আবাদি জমি পানিতে ডুবে গেছে। দীর্ঘসময় ধরে জলমগ্ন থাকায় কয়েক হাজার গবাদিপশু চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। ১০০ টাকার এক পোন কাড়ি (৮০টা খড়ের আটি) এখন ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক জায়গায় টাকা দিয়েও মিলছে না খড়-কাড়ি। এ অবস্থায় গবাদিপশুর মালিক ও খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে অনেক গৃহস্থ গবাদিপশু বাঁচাতে মাঠের বাড়ন্ত রোপা আমন ক্ষেতের ধান গাছ কেটে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় বাজারে গম ও ছোলার ভূষি, খৈল, চালের কুড়া, ভূট্টার আটাসহ সকল দানাদার পশুখাদ্যের মূল্য কৃষকের নাগালের বাইরে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, এ জেলায় গবাদিপশুর খামার ১১ হাজার ৭৮২টি রয়েছে।

অধিকাংশ গবাদিপশুর মালিক মাঠ-ঘাট ও জমির আইলের ঘাস সংগ্রহ করে এবং বাড়ীতে সংরক্ষিত খড়-কাড়ি দিয়ে গবাদিপশু প্রতিপালন করে থাকেন। কিন্তু এ বছর বোরো মৌসুমে টানা বর্ষণে বোরো ক্ষেতের খড়-কাড়ি কোন কৃষকেই শুকাতে ও সংরক্ষণ করতে পারেননি। চলতি আমন মৌসুমের শুরু থেকেই দফায় দফায় ভারী বর্ষণের ফলে গৃহস্থ বাড়ীতে সংরক্ষিত খড়-কাড়ি পচে যায়। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারনে আমন ক্ষেতের আইল ও রাস্তা ঘাটের ধার থেকে ঘাস সংগ্রহ করা সম্ভব না হওয়ায় গো-খাদ্যের বর্তমান সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। গবাদিপশুর খাবারের চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে রোপা আমন ক্ষেতের ধান গাছ ক্রয় করে নিতে হচ্ছে। অথচ অনেক পরিশ্রম, অর্থ ব্যয় ও যত্ন করে তিলে তিলে পরিচর্যা করে গড়ে তোলা এ ধান ক্ষেত। অথচ যেখানে মাস খানেক পর কৃষকের সোনালী ধান ঘরে তোলা সম্ভব সেখানে বাড়ন্ত রোপা আমন ক্ষেতের ধান গাছ কেটে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে সদর উপজেলায় ৩৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে রোপা আমান লাগানো হয়েছে। এর অধিকাংশ এখন জলমগ্ন। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জাহেরুল ইসলাম বলেন, গবাদিপশুর মালিক ও খামারিরা প্রত্যেককে যদি গো-খাদ্যের জন্য স্বল্প পরিসরে নিজেদের বাড়ী-ভিটায় কিংবা আবাদী এককানি জমিতে বারবার কর্তনযোগ্য উচ্চফলনশীল নেপিয়ার, জার্মান ও পারা জাতীয় ঘাসের চাষ করতেন। তাহলে অনেকাংশে গবাদিপশুর এ খাদ্য সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হতো।