মোঃ রিয়াজ উদ্দিন, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জন্য চসিক মেয়রের দরজা সবসময় খোলা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, অতীতের ১৫ বছরে যারা এফবিসিসিআইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, চেম্বার অব কমার্সে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম গুটি কয়েক ব্যবসায়ী তাদের স্বার্থকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের সমস্ত স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। আশা করি এখন যারা টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির দায়িত্বে আছেন, তারা এ ধরনের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিবেন না এবং সমগ্র ব্যবসায়ীর স্বার্থকে দেখে প্রাধান্য দিবেন।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল মনসুরের পরিচালনায় এবং ধর্ম সম্পাদক তাজুল ইসলামের কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর শাহজাহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (দক্ষিণ) ডিসি শাকিলা সুলতানা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি ও অভিষেক উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আলহাজ্ব মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন।
অভিষেক উপলক্ষে ঐতিহ্যের টেরিবাজার নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সমিতির মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তাদের স্মরণ করে তাদের মাগফেরাত কামনা করা হয়।
এসময় শাহাদাত হোসেন বলেন, টেরিবাজার এমন একটি জায়গা, যেখানে ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সময়ে যায়নি বা যাচ্ছে না সেটি কেউ বলতে পারবে না। কম দামের মধ্যে ভালো মানের কিছু কিনতে চাইলে অবশ্যই টেরিবাজারের নাম আসে। কিন্তু গত ১৬টি বছর কিভাবে জোর করে বিনাভোটে তারা সেখানে টেরিবাজার সমিতি গঠন করেছে। নির্বাচনের নামে বারবার প্রহসন হয়েছে। যেভাবে সারা বাংলাদেশে তারা ভোটের অধিকার হরণ করেছে, ঠিক একইভাবে টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচনে তারা জোর করে ভোটের অধিকার হরণ করেছে।
চসিক মেয়র বলেন, টেরিবাজার সমিতির নির্বাচনের সময় কোতোয়ালীর ওসি ছিলেন নিজাম, সে আরেক ভোট ডাকাত, ভোট ডাকাতের সর্দার একেকজন। এগুলো প্রথমে বলেছে, না ঠিক আছে, সব ঠিক আছে। কিন্তু নির্বাচন যখন শুরু হয়েছে, রাতের অন্ধকারে কিভাবে মেরে সমস্ত টেরিবাজারের ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে জোর করে তারা সেখানে আওয়ামী ব্যবসায়ীদের জিতিয়ে দিয়েছে। ঠিক যেভাবে তারা ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে এবং বিনাভোটে নির্বাচন করেছে। একটি বৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনারা আজ অভিষিক্ত হয়েছেন, দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। এ দায়িত্ব অর্পনের মধ্য দিয়ে, অভিষিক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে টেরিবাজার ব্যবসায়ী তথা সমগ্র চট্টগ্রামের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা পূরণ করবেন।
মেয়র হিসেবে তিনি টেরিবাজার ব্যবসায়ীদের কাছে আশা রাখছেন, এ চট্টগ্রাম যেন একটা ব্যবসায়ীবান্ধব শহর হয়। এসময় হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স বিষয় তুলে ধরে মেয়র বলেন, আপনাদের বলতে চাই, আপনারা ব্যবসায়ী। আমি চাই, একটা ব্যবসায়ীবান্ধব শহর এ চট্টগ্রাম হোক। আপনাদের যে হোল্ডিং ট্যাক্স আছে, অতীতেও প্রচুর পরিমাণে হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স দিতে হয়েছে। আপনাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যেগুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে, সেগুলো ছাড়া যেগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি আপনাদের সঙ্গে বসে যেভাবে আপনাদের দিতে সুবিধা হয় সেভাবেই করে দেওয়া হবে। ট্রেড লাইসেন্সের ব্যাপারে যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না হয়, সেটি আমি দেখবো। কোনো সমস্যা হলে আমি আপনাদের পাশে আছি, কাছে আছি। ব্যবসায়ীদের জন্য চসিক মেয়রের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, টেরিবাজার বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমেই দেশ অগ্রসর হয়। ব্যবসায়ীদের ভূমিকার কারণে দেশ একটি সত্যিকার অর্থে গতিশীল, শক্তিশালী ও সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তরিত হয়। তবে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারেন না। প্রশাসনের সাথে ব্যবসায়ীদের কাজ আদায় করতে গিয়ে ঘুষের প্রথা চালু হয়। আর একটা হচ্ছে আমাদের দেশে অন্যায়, অনাচার, ব্যভিচার আর বিশ্ববাজারে মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে। ইসলামে যে একটা অর্থনীতি আছে, আমাদের ওলামায়ে কেরামগণ অর্থনীতির ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে পারেন না। যার কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন আমার পিয়নেরও ৪০০ কোটি টাকা আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডিসি শাকিলা সুলতানা বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অন্যতম ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র টেরিবাজার। এই মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত। মার্কেটে বিপুলসংখ্যক মহিলা ক্রেতা আসেন, তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকতে হবে। এ মার্কেটকে আরো উন্নত জায়গায় নিয়ে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। আমিও চট্টগ্রামের মেয়ে হিসেবে আমার দায়িত্বকালীন সময়ে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন।
নবনির্বাচিত সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, অনেক চড়াই উতরাই-পেরিয়ে আমরা আজকের অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি। ২০১৭ সালের নির্বাচনে ব্যবসায়ী সমিতিতে রাজনীতির প্রভাব পড়েছিল। তবে ৫ আগস্টের পর মানুষের মাথার ওপর থেকে পাথর সরে গেছে। আমাদের সমিতি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেও সমিতির মধ্যে রাজনীতি প্রবেশ করতে দেব না। আমাদের কমিটির মেয়াদ ২ বছর। মেয়াদের একদিনও বেশি দায়িত্বে থাকব না। আমি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাই।
উক্ত অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি আলহাজ্ব মো. আলমগীর, আলহাজ্ব ফরিদুল ইসলাম, আলহাজ্ব গোলাম নবী, যুগ্ম সম্পাদক আলহাজ্ব মো. ফরিদ উদ্দিন, সহ সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মহিউদ্দীন, শেখ শহিদ সোহরাওয়ারদী বাহাদুর, সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব ইশতেহাদ হোসেন রাজিব, অর্থ সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা এমরানুল হক সাইয়েদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক মো. বাকের উল্যাহ, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. হারুনর রশিদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইব্রাহিম পারভেজ, দপ্তর সম্পাদক মামুনর রশিদ, অডিটর সম্পাদক দিদারুল আলম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো. নাছির উদ্দীন, কার্যনির্বাহী সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, মোহাম্মদ জাবেদ ও আলহাজ্ব আবু ছালেক প্রমুখ।