গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের পুনর্বহালের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী। তিনি বলেছেন: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চিঠি কি আপনি দেখেছেন? তিনি ১৯ জনকে (পৌরসভার মেয়র পদ থেকে অপসারিত) প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছেন। তাহলে তিনি কেন সুপারিশ করছেন?
‘চট্টগ্রামে বিএনপির শাহাদাত হোসেন কীভাবে তাহলে এখন মেয়র হলেন? সরকার–রাষ্ট্র কাউকে প্রশাসনিক জায়গায় বসাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এই বিষয়গুলোর ফাংশনালাইজ (কার্যকারিতা) নিয়ে তো আমরা কথা বলবই। রাষ্ট্রের কাছে আমরা জবাবদিহি চাই। এখন তো কেউ কাউন্সিলর হবেন না; প্রশাসক হবেন। যিনি স্বতন্ত্র আছেন, যিনি আমার–আপনার মতোই সাধারণ মানুষ, তার অধিকারটা কোন ভিত্তিতে খর্ব করা হচ্ছে?’
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দেশের একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন।
‘যেখানে প্রশাসক নিয়োগ হচ্ছে, সেখানে আপনারা চান যারা ছাত্র–জনতার আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ হোক’- এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন: জি। যারা আন্দোলনে ছিলেন, যারা আওয়ামী লীগ বা তাদের দোসর নন, যারা দক্ষ–যোগ্য, যারা দুর্নীতি–চাঁদাবাজির সঙ্গে নেই, তাদের বিষয়ে আমরা বলেছি। তিনি বিএনপির লোক হলেও সমস্যা নেই।
জাতীয় নাগরিক কমিটির দল গঠন নিয়েও বিএনপি বারবার জাতিকে মিসলিড (বিভ্রান্ত) করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একইসাথে বিএনপিকে দেশের প্রথম কিংস পার্টি বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন: জাতীয় নাগরিক কমিটি কোনো কিংস পার্টি গঠন করছে না, কারণ তারা সরকারে নেই। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কিংবা ছাত্র উপদেষ্টারা নতুন দল গঠনের সাথে যুক্ত নেই। গণঅভ্যুত্থানের সাথে জড়িত শক্তিকে নিয়ে দল গঠন করার চিন্তা করা হচ্ছে। সুতরাং এটি কোনো কিংস পার্টি নয়। বরং প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিএনপিই বাংলাদেশের প্রথম কিংস পার্টি। এখনও বিএনপি কিংস পার্টি।
স্থানীয় সরকার বিষয়ে তিনি বলেন: আমাদের ফোরামে দুটি পর্যালোচনা এসেছে। প্রথমত, আমরা চাই না আমলাতন্ত্র দিয়ে স্থানীয় সরকার চলুক। দ্বিতীয়ত, যারা স্বতন্ত্র, যারা আওয়ামী লীগের দোসর নন, তাদের প্রশাসক হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন: স্থানীয় সরকার নির্বাচনটা দ্রুতগতিতে হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় নির্বাচনের আগে কি না, সে বিষয়ে আমরা এখনো ফোরামে সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে মানুষের সেবাটা আমরা চাই। স্থানীয় সরকার আমরা কার্যকর দেখতে চাই।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন: সরকার যখন কাউন্সিলদের অপসারণ করে, তখন আমরা বিরোধিতা করিনি। স্বতন্ত্র যারা, তারাও আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বলেই বাদ পড়েছেন। যিনি স্বতন্ত্র হিসেবে বাদ পড়েছেন, নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। যিনি কোনো দলের নন, তিনি এখন আর কাউন্সিলর নন, সাধারণ মানুষ। কিন্তু ওয়ার্ডগুলোতে (সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা) প্রশাসক নিয়োগ করা হলে সেখানে কি আমলাতন্ত্রের কাউকে দেওয়া উচিত, নাকি জনগণের মধ্য থেকে দেওয়া উচিত? সেই জায়গাটায় আমরা বলেছি, প্রশাসক পদে আমলা দেওয়া উচিত নয়। জনগণের মধ্য থেকেই প্রশাসক দেওয়া উচিত। প্রান্তিক পর্যায়ে স্থানীয় সরকারে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য এটা প্রয়োজন। এটা আমলাতন্ত্র দিয়ে হয় না। নির্দলীয় স্বতন্ত্র কাউন্সিলরদের পদচ্যুতির মধ্য দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করানো হয়েছে। এখন তাঁরা সাধারণ মানুষ। অন্যদের মতো তাঁরাও প্রশাসক হতে পারেন। সমাজের সঙ্গে তাদের অনেক বেশি সংযোগ রয়েছে। তাহলে তার অধিকারটা কেন ক্ষুণ্ন করা হবে? আমরা এই জায়গাটা অ্যাড্রেস (সামনে আনা) করতে চেয়েছি।