নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চালের বাজার অস্থির করার অন্যতম মূল হোতা রশিদ মিনিকেটের রশিদ গ্রেফতার হলেও চট্টগ্রামের চাল পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাহাব উদ্দিন অদৃশ্য খুঁটির জোরে এখনও অধরা রয়ে গেছেন। যৌথবাহিনী এবং ভোক্তা অধিদপ্তর সাহাব উদ্দিনের মেসার্স খাজা ভাণ্ডারে অভিযান চালালেও অদৃশ্য কারণে তাদের দু’জনকে গ্রেপ্তার করেনি। এরমধ্যে সাহাব উদ্দিনের ম্যানেজার জাবেদকে যৌথবাহিনী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলেও পরে তাকে ছেড়ে দিয়েছে!
তবে ভোক্তার অভিযানে সরকারি চাল অন্য কোম্পানির বস্তায় ভরে বিক্রি (পাচার) করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সরকারি চাল অন্য কোম্পানির মোড়কে পাচার করে প্রতারণার মাধ্যমে বাজার অস্থির করলেও কোন খুঁটির জোরে কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, জনমনে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে মেসার্স খাজা ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী সাহাব উদ্দিন আড়তদার সরকারি চাল অন্য কোম্পানির বস্তায় ভরে বিক্রি ও পাচার করে আসছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা হলেও অবৈধভাবে সরকারি চাল অন্য বস্তায় ভরে পাচার ও বিক্রির অসাধু ব্যবসা তিনি বন্ধ করেননি। এখনও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে তিনি অবৈধভাবে সরকারি চাল পাচার করে যাচ্ছেন।
গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) দিবাগত রাতে ৬ গাড়ি সরকারি চাল পাচারের তথ্য পেয়ে পাহাড়তলী জোনের এসির নেতৃত্বে পুলিশের ৩ গাড়ি ফোর্স নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিনের খাজা ভাণ্ডারে অভিযানে গেলেও অদৃশ্য কারণে অবৈধ চালের গাড়ি আটক করা হয়নি। অন্যদিকে এসি এমন কোনো অভিযান হয়নি এবং তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। কিন্তু অভিযুক্ত আড়তদার অভিযানের কথা স্বীকার করেছেন। এসির কাছে কাগজপত্র দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এমন ঘটনায় য়ে প্রিয়দেশ নিউজে ‘চট্টগ্রামে সরকারি চাল কোম্পানির বস্তায় ভরে পাচার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর অবশেষে রাতেই যৌথবাহিনী খাজা ভাণ্ডারে অভিযান পরিচালনা করে। পরবর্তীতে ভোক্তা অধিকারের আরেক অভিযানে অন্য কোম্পানির মোড়কে ভরে চাল বিক্রি প্রমাণিত হওয়ায় খাজা ভাণ্ডারকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে অন্য কোম্পানির বস্তায় ভরার কারণে জরিমানা হলেও সরকারি চাল অবৈধভাবে ক্রয় করে পাচার করার দায়ে তাকে গ্রেফতার না করায় ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ অসন্তোষ জানিয়েছেন।
পাহাড়তলীতে খাজা ভাণ্ডারে অভিযানের সময় বাজার করতে আসা মেহেদী হাসান নামের একজন সাধারণ ক্রেতা বলেন, খাজা ভাণ্ডারের বিরুদ্ধে সরকারি চাল ক্রয়-বিক্রয়ের অভিযোগে অভিযান চালাতে দেখেছি। এখনও অভিযান হচ্ছে। বিগত দিনেও হয়েছে। কাড়ি কাড়ি অবৈধ টাকার ব্যবসা করে দেড় লাখ টাকা জরিমানা দেওয়া তাদের জন্য কোনো বিষয় না। কিন্তু বিভিন্নভাবে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে তারা গ্রেফতার থেকে পার পেয়ে যায়। এজন্য তারা প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে ব্যবসা করে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। ছাত্র-জনতার বুকের রক্তে অর্জিত বর্তমান নিরপেক্ষ সরকারের কাছে আমাদের দাবি, বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হলেও এসব অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। নাহলে জনজীবন দিন দিন নরকে পরিণত হওয়ার দিকেই ধাবিত হবে।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রতিনিয়ত রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে কম দামে চোরাইভাবে চাল ক্রয় করেন সাহাব উদ্দিন। সেই চাল অন্য কোম্পানির বস্তায় ভরে চড়া দামে বাজারে বিক্রি ও পাচার করে থাকেন। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সাহাব উদ্দিন।
স্থানীয়রা জানান, চট্টগ্রামে চালের কোনো সংকট না থাকলেও অসাধু আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের বাজার অস্থির করে যাচ্ছেন। এর উপর সরকারি চাল অন্য কোম্পানির বস্তায় ভরে চড়া দামে বিক্রি করা জনসাধারণের সাথে প্রতারণা। প্রশাসন এভাবে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখলে চালের বাজারের অস্থিরতা কমবে। তবে চাল পাচারকারী খাজা ভাণ্ডারের মালিক সাহাব উদ্দিনসহ পুরো সিন্ডিকেটকে আটক করে আইনের আওতায় না আনলে বাজার পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
মেসার্স খাজা ভাণ্ডারের সাহাব উদ্দিন বলেন, এসব চাল আমি রেশন স্টোর থেকে ক্রয় করি। আমার কাছে কাগজপত্র আছে। সেগুলো অভিযান পরিচালনাকারীদের কাছে দিয়েছি। তবে বৈধভাবে এসব চাল ক্রয়-বিক্রয় করলে বর্তমান ও পূর্ববর্তী অভিযান কেন পরিচালনা হয়েছে সেসব প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেননি। এছাড়া কোন খুঁটির জোরে তিনি সবসময় গ্রেপ্তার এড়িয়ে যাচ্ছেন সে বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি সাহাব উদ্দিন।
এসব বিষয়ে জানতে মেসার্স খাজা ভাণ্ডারের ম্যানেজার ও চাল পাচার চক্রের অন্যতম হোতা জাবেদ প্রথমে কল ধরে নিজের নাম অস্বীকার করেন। পরে তারা এসব পাচারের সাথে জড়িত নন বলে জানিয়েছেন। তবে সরকারি চাল নিয়ে অনিয়ম না করলে কেন তাদের আড়তে অভিযান চালানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও কেন ও কীভাবে ছেড়ে দিয়েছে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি জবাব না দিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের সময় সরকারি চাল নানাভাবে কালোবাজারে বিক্রির চল শুরু হয়েছিল। এখন এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সেজন্য খাজা ভাণ্ডারসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলমান রয়েছে। কালোবাজারে চাল ক্রয়-বিক্রয়ের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যারা চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয় করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।