গোলাম মাহামুদ শাওন, বোরহানউদ্দিন প্রতিনিধিঃ
এক স্বপ্নবাজ কৃষক মফিজ। দু-চোখে স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলেন মাল্টা চাষ। স্বপ্ন আজ বাস্তবতা হয়ে ধরা দিয়েছে মফিজের কাছে। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাইনউদ্দিন মফিজ।গত সিজন থেকে একসাথে মাল্টা এবং কমলার বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করছেন তিনি। এছাড়া সমতল ভূমিতে এসব ফল হয়না বলে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল। কিন্তু বাণিজ্যিভাবে মাল্টা এবং কমলা গাছের থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখে এ ধারণা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ফলে ভোলার সমতল ভূমিতে মাল্টা-কমলা চাষের নতুন দুয়ার খুলে গেছে বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ ও উদ্যোক্তারা।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটর দক্ষিণে কাচিয়া ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের ঘোলপাড়-রতনপুর সড়কের পাশে এক স্বপ্নবাজ যুব উদ্যোক্তা মাইনুদ্দিন মফিজ গড়ে তুলেছেন ৩ একর জমির উপর মাল্টা, কমলা বাগান। সাথে আছে থাই পেয়ারা। ইতিমধ্যে বেশীরভাগ মাল্টা বিক্রি হয়ে গেছে। এর পাশেই আছে নানা জাতের বিশাল সবজি বাগান। সবজি বাগানের মধ্যে কাটা নালায় আছে বিভিন্ন প্রকারের মাছ। প্রতিদিন দূরবর্তী এলাকা থেকে মানুষ নান্দনিক এ কৃষি ফার্ম দেখতে আসেন। যাবার সময় ছবি তোলে; ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। কিছু বেকার যুবক বাগান করার পরামর্শও নিচ্ছেন।
সমগ্র ফার্ম পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা মাইনুদ্দিন মফিজ। ২০২২ সালে তিনি সরকারীভাবে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের মধ্যে নিরাপদ সবজী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ অর্জন করেন। কৃষির উপর বিভিন্ন স্তরে প্রশিক্ষণ রয়েছে তাঁর। মাইনুদ্দিন মফিজ জানান,এ বাগানে প্রাথমিকভাবে বারি-১ মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এছাড়া কমলার জাতের মধ্যে আছে ভূটানী, চায়না থ্রি, কাস্মিরী-১। স্থানীয় বাজারে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। কমলা বিক্রি নেমেছে ৪ লাখ ৭৭হাজার টাকা। এখনো তিনি ২ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রির আসা ব্যক্ত করেন। এ প্রজাতিগুলো উত্তরবঙ্গের নাটোর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে তিনি যানান।
অতিবৃষ্টির কারণে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া পেলে আগামী সিজনে এ উৎপাদন আরো বেশী হবে। তিনি আরো জানান, শতভাগ বিষমুক্ত ফল উৎপাদন আমার লক্ষ্য। আমি করছিও তা-ই। দেখা যায় বেশীর ভাগ ফল আমরা আমদানি করি। তা-ও স্বাস্থ্যকর না। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ফলকে আর খাবার উপযোগী রাখেনা। আরো ২০ একর নতুন বাগান করার কাজ চলছে। সেখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ মন্ডল জানান, ভোলার মাটি অন্যান্য জেলার তুলনায় ভালো। বিশেষ করে এ ধরনের মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তদারকিটা ঠিক থাকলে পোকা-মাকড়ের আক্রমন, ছত্রাক আক্রমন সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। তবে বেশি লাভের আশায় ফল যথাসময়ের আগে তুললে ফলের গুনাগুন ঠিক থাকেনা। মফিজের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। কৃষিবিভাগ কৃষি প্রযুক্তি,পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগীতা দিয়ে তাঁর পাশে আছে। যদি তাঁর লোনের প্রয়োজন সেক্ষেত্রেও কৃষি বিভাগ সহযোগীতা করবে। তিনি আরো যানান মফিজের দেখাদেখি যদি অন্য উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসে তাহলে তাদের পাশেও বোরহানউদ্দিন কৃষি বিভাগ থাকবে।