বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ উপকূলের আরও কাছে চলে এসেছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। এতে করে দুশ্চিন্তায় রয়েছে উপকূলের মানুষ। তবে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ‘দানা’র তাণ্ড চালানোর আশঙ্কা নেই বলে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) দানা নিয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের সমতলে প্রবেশ করার কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত ৩টার দিকে শক্তিশালী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বৃহস্পতি-শুক্রবার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। তখন বাতাসের গতিবেগ ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার থাকতে পারে।
বজলুর রশিদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় দানা এখন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে রয়েছে। তবে এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের সমতলে আসার কোনো আশঙ্কা নেই। মধ্যরাতে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আরও উত্তর- উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৮.৪° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি আজ সকাল ৬টায় (২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৫৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮৫ কিমি দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারি (৪৪-৮৮ মি.মি.) থেকে অতিভারি (≥ ৮৯ মি.মি.) বর্ষণ হতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিমি এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১১০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ০৩ (তিন) নম্বর (পুনঃ) ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার মধ্যরাতেই সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। গত সাত ঘণ্টায় উপকূলের দিকে আরও ৯০ কিলোমিটার এগিয়েছে ‘দানা’। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সাগরদ্বীপ থেকে মাত্র ৩৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়টি। ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে এটি ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর থেকে ক্রমে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে ‘দানা’। অনুমান করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে এটি স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে। ওড়িশার ভিতরকণিকা থেকে ধামারার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের ‘ল্যান্ডফল’ হবে। স্থলভাগে আছড়ে পড়ার সময় এর গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার গতি কখনো কখনো ১২০ কিলোমিটারও হতে পারে।