৫০ বছরের গবেষণায়ও সেরা হবে যে ৪ উপদেশ

বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার, আলোড়ন সৃষ্টিকারী গ্রন্থ ‘লা তাহযান’-এর রচয়িতা শায়খ ড. আয়াজ আল কারনি হাফিজাহুল্লাহ তাঁর এক বক্তব্যে জানান-‘আমাকে যদি ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা ও গবেষণা লব্দ কোনো উপদেশ করতে বলা হয়; তাতে আমি ৪টি ছোট্ট বাক্যের উপদেশ দেব; আর ৫০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও যদি কোনো উপদেশ দিতে বলা হয়; তাতেও আমি এই ৪টি উপদেশই দেব।

কারণ এ ৪টি উপদেশই সারাজীবনের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। যা পালন করলে মানুষের জন্য কল্যাণ ছাড়া কোনো খারাবি বা অকল্যাণ বয়ে আনবে না। তাহলো- লা তাহযান : হতাশ হবেন না; লা তাখাফ : ভয় বা সন্ত্রস্ত হবেন না; লা তাগদাব : রাগ করবেন না; লা তাসখাব : আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট হবেন না।

এই ৪টি বাক্যের উপদেশ; যদি কেউ এগুলোর ওপর আমল করে চলতে পারে; এ উপদেশগুলো মেনে চলতে পারে তবে তার দুনিয়ার জীবন হবে সুখময়। আর আল্লাহর ইচ্ছায় পরকালের সুখ-শান্তিও সুনিশ্চিত।

লা তাহযান : হতাশ না হওয়াহতাশ হওয়া যাবে না। অতীতের কোনো কাজ নিয়ে কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। অতীতের ঘটে যাওয়া কাজ ভুল বা সঠিক; যা-ই হোক না কেন, এ নিয়ে ভেবে হতাশ হওয়ার সুযোগ নই। অতীতের কাজ নিয়ে মনে কষ্ট রাখার প্রশ্নই ওঠে না। মনের স্মৃতি থেকে অতীতের সব হতাশা মুছে দিতে হবে।

লা তাখাফ : সন্ত্রস্ত না হওয়াভবিষ্যতের কোনো ব্যাপারে ভয় না পাওয়া বা সন্ত্রস্ত না হওয়া। ভবিষ্যতে কী হবে? সেই চিন্তায বা টেনশনে সন্ত্রস্ত থাকা যাবে না। আর এটা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। কেননা একজন মুমিন যতবেশি তাওহিদে বিশ্বাসী; আল্লাহর প্রতি ঈমান যতবেশি হবে; ভবিষ্যৎ নিয়ে তার ভয় তত কম হবে।

তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয় পাওয়া বা সন্ত্রস্ত হওয়া যাবে না। ভবিষ্যতের যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা এবং গভীর বিশ্বাস রাখতে হবে। বরং ভবিষ্যতের যাবতীয় কাজকে মহান আল্লাহ তাআলার ওপর এ মর্মে ছেড়ে দিতে হবে; ন্যস্ত করতে হবে– যে আল্লাহ বান্দার অতীত দেখেছেন; সেই আল্লাহ তাআলাই বান্দার ভবিষ্যৎ দেখবেন।- যে আল্লাহ অতীতে বান্দাকে বহুবার বিভিন্ন সমস্যা থেকে উত্তরণে পথ বের করে দিয়েছেন; আল্লাহর ইচ্ছায় তিনিই বান্দাকে ভবিষ্যতে সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন।

লা তাগদাব : রাগ করা যাবে নাচলমান জীবনে কোনোভাবেই অতিরিক্ত বা নিয়ন্ত্রণহীন রাগ বা গোস্বা করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোনো এক ব্যক্তি উপদেশ চাইলে, তিনি তাকে বলেছিলেন- লা তাগদাব, লা তাগদাব, লা তাগদাব। রাগ বা গোস্বা করা যাবে না। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছিলেন।চলতি জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণহীন রাগ তথা গোস্বা করা যাবে না। শেষে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি রাগ না করে থাকতে পার তবে পরকালে জান্নাত পাবে।

মনে রাখতে হবেএ দুনিয়ায় মানুষ যত অশান্তি, যক অনিষ্ট, যত ক্ষতি হয়, যত অপমান-অপদস্ত হয়, এর বেশির ক্ষেত্রেই দায়ী হচ্ছে মানুষের অনিয়ন্ত্রিত রাঘ বা গোস্বা। যদি নিয়ন্ত্রণহীন রাগ এড়িয়ে চলা যায় কিংবা রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা রাগ থেকে দূরে থাকা যায় তবে বহু ক্ষতি, বহু অপমান, বহু অনিষ্টতা থেকে বেঁচে যাবে মানুষ। সুতরাং রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করার বিকল্প নেই। কেননা রাগ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে।

লা তাসখাব : আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট না হওয়াআল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য যে তাকদির নির্ধারণ করে রেখেছেন, তার ওপর খুশী থাকা। এ ফয়সালার ওপর কোনোভাবেই অসন্তুষ্ট না হওয়া। মানুষের এ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখা জরুরি যে, ‘মানুষ নিজের জন্য যে বিষয়কে ভালো মনে করে কিংবা নিজের জন্য যেটা নির্ধারণ করে; তারচেয়ে আল্লাহ যা মানুষের জন্য ভালো মনে করেন বা নির্ধারণ করে সেটাই উত্তম।মোট কথা আল্লাহর যাবতীয় ফয়সালায় খুশী থাকা। আল্লাহর দেয়া ফয়সালা বা তাকদিরের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হওয়া যাবে না।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উল্লেখিত ৪টি বাক্যের উপদেশ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আর তাতেই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভে ধন্য হবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি ধাপে উল্লেখিত উপদেশগুলো বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।