‘মাছে ভাতে বাঙালি’ বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি বাঙালির ঐতিহ্য ও জীবন যাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
নদী-নালা, খাল-বিল সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎসের মাছ যেমন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, তেমনি খেতেও সুস্বাদু। প্রায় এক দশক আগেও প্রাকৃতিক উৎসের মাছ প্রচুর পাওয়া যেত দেশের উত্তরের এ জেলায়। বর্তমানে তা আর পাওয়া যায় না বললেই চলে। বাজারে অল্প যা কিছু পাওয়া যায় তার দামও অত্যন্ত চড়া। ফলে এ এলাকার ‘মাছে-ভাতের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি’ অনেকটা বাধ্য হয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে খাচ্ছে খামারে বা হ্যাচারীতে চাষ করা মাছ।
ঠাকুরগাঁওয়ের অন্যতম নদী টাঙ্গন। বর্ষার পানি জমা হতে না হতেই টাঙ্গন নদীসহ এর ব্যারাজের পানিতে চলছে মা মাছ নিধনের ‘উৎসব’। একশ্রেণির জেলে ও মাছ শিকারী টাঙ্গন নদী ও ব্যারাজের বিভিন্ন পয়েন্টে কারেন্ট জাল, ফিকা জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধরছেন মা মাছ । স্থানীয় হাটবাজারে সেগুলো প্রকাশ্যে বিক্রি করলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না জেলা মৎস্য বিভাগকে । অথচ এই সময়টা মাছের প্রজননকালীন সময়। কঠোর নজরদারী না থাকায় স্থানীয় জেলেরা অবাধে ধরছে দেশীয় নানা প্রজাতির মা মাছ । কারন বর্ষার এ সময়টাতে ধরা পড়ছে সব ধরনের পোনা ও ডিমওয়ালা মা মাছ।
দেশের প্রচলিত মৎস্য আইনে ১ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পোনামাছ ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন করা যাবে না। যদি কেউ এ আইন অমান্য করে তাহলে তার অর্থদন্ড ও জেল জরিমানা কিংবা উভয় দন্ড হতে পারে। কিন্তু এর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বাস্তবে দেখা যায় নি এ জেলায়।
গতকাল সোমবার জেলার সদর উপজেলাধীন, টাঙ্গন নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায় -জেলেরা বাদাই, কারেন্ট, ফিকা, ছাপি জালসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ডিমওয়ালা কৈ, মাগুর, শিং, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, শৌল, বোয়াল, বড় বাইন ,তারা বাইন, শালবাইন, কুচিয়া, খোকসা, গচি, বইরালি, গোলসাসহ নাম না-জানা বহু প্রজাতির মাছ প্রকাশ্যে নিধন করছেন।
যদিও দেশীয় প্রজাতির এই মাছগুলো বিলুপ্তির পথে। সরকারিভাবে মা মাছ নিধন নিষেধ থাকলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন ডিমওয়ালা ওই মাছগুলো আশপাশের স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। মাছগুলো স্থানীয় লোকজন বেশি দাম হাঁকিয়েই কিনে নিচ্ছেন।
জেলার সচেতন মহলের অনেকেই জানান, একটা সময় ছিল জেলে ও কৃষকেরা শখের বসে স্বল্প আকারে পোনা মাছ ধরত। আর এখন মহোৎসব চলছে পোনা ও ডিমওয়ালা সব ধরণের মাছ নিধনের । তাই এই সময় প্রশাসনের পক্ষে কঠোর নজরদারী ও পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনে মৎস্য আইন প্রয়োগ করলে মাছের বংশ বৃদ্ধি করা সহজ হত। আর ব্যরাজের ও নদীর পানিতে স্রোত তৈরি হচ্ছে, সে স্রোতের পানিতেই রুই, ঘনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ ডিম ছাড়বে। পানির স্রোত না থাকলে মাছ ডিম ছাড়তে পারে না। আর টাঙ্গন নদী ও ব্যারাজের স্রোতকে পুজি করেই চলছে মা মাছ নিধন। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ আফতাব হোসেন প্রিয়দেশকে বলেন যে, টাঙ্গন ব্যারাজের বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ নিধনের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে পুরো এলাকায় একসঙ্গে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।