চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিকদের আন্দোলনে ডিসিকে তাৎক্ষণিক বদলি

চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামের বিতর্কিত ও সমালোচিত জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান চট্টগ্রাম থেকে অন্যত্র বদলী ঠেকাতে সর্বশেষ আশ্রয় নিয়েছিল চট্টগ্রামের অবৈধ প্রেসক্লাব ও নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু সাংবাদিকের। ডিসি’র বিরুদ্ধে প্রকাশ ও প্রচার হওয়া সংবাদ মুছে ফেলার শর্তে প্রেসক্লাব নিয়ে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার নীল নকশা তৈরী করেও শেষ রক্ষা হলোনা চট্টগ্রামের এই জেলা প্রশাসকের।

আজ (২০ আগস্ট) চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবীতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক ঐক্য ৷জেলা প্রশাসককে চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক ঐক্যের নেতৃবৃন্দ।

একপর্যায়ে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ঢাকা থেকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক ঐক্যের নেতাদের আশ্বস্ত করে জানান, আজই চট্টগ্রামের ডিসিকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে৷ ডিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেয়ার এরপরই আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচী সমাপ্তের ঘোষনা দেন৷

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নিয়ে বৈষম্যের শিকার হওয়া বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন পোর্টালের সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷ বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক ঐক্য চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এর সম্মুখে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব কমিটির বৈষম্যমূলক আচরণ এর তীব্র প্রতিবাদ জানালেও স্বৈরাচারের দোসর অবৈধ কমিটির নেতারা নিজেদের মধুর হাঁড়ি আগলে রাখতে নানান অপতৎপরতা চালিয়ে গেছে৷

বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক ঐক্যের দাবি, আন্দোলনে অংশ নেয়া গণমাধ্যম কর্মীরা ছিলেন অধিকার বঞ্চিত, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের বৈষম্যের শিকার। তারা তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিবাদ আদায়ের পথে বারংবার হামলার শিকার হয়। চলমান আন্দোলন নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পক্ষে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালানোকে আড়াল করে সংবাদ প্রচার করা ফ্যাসিবাদের দোসরদের মধ্যকার একাধিক ব্যক্তি বৈষম্যের স্বীকার আন্দোলনরত গণমাধ্যমকর্মীদের নেতা সেজে বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করছেন এবং জেলা প্রশাসক তার সাজানো নাটকে তাদের এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব নেতাদের মধ্যকার একটি গোপন মিটিং এর আয়োজন করেন। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসক অদ্যবধি আন্দোলনরত গণমাধ্যম কর্মীদের সমন্বয়ক হতে কাউকে আহবান করেননি বৈঠকের জন্য। ছাত্র-আন্দোলনে চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ছাত্রদের গুলির নির্দেশ দাতা বিতর্কিত জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নতুন ষড়যন্ত্রের শিকার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নিয়ে বৈষম্যের শিকার আন্দোলনকারী গণমাধ্যম কর্মীরা।

‌‘আন্দোলন ছিনতাইয়ের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসক ফ্যাসিবাদের দোসরদের সাথে আঁতাত করে বৈষম্যের শিকার অধিকার বঞ্চিত সাংবাদিকদের আন্দোলনকে অপকৌশলে ভিন্ন রুপ দেয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সংস্কার বিরোধী ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়ে একের পর এক গোপন বৈঠক করে চলেছেন। ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে বৈষম্য বিরোধী সাংবাদিক ঐক্যের নেতা কর্মীরা চট্টগ্রাম জেলা-প্রশাসকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এর কার্য়ালয়ে স্মারক লিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের কার্য়ালয়ের সম্মুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।’

বক্তারা আরো বলেন, এক সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেলা প্রশাসকের ইশারায় কয়েকজন দূর্বৃত্ত আন্দোলনরত সাংবাদিকদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে তাদের উপর আক্রমন করে বসেন। পরবর্তীতে আন্দোলনরত গণমাধ্যম কর্মীদের পক্ষে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিয়ান লেনিনের নেতৃত্বে বিভাগীয় কমিশনাররের কার্য়ালয়ে স্মারক লিপি প্রদান করেন। স্মারক লিপি প্রদানকালে আন্দোলনকারীদের পক্ষের সমন্বয়ক আরিয়ান লেনিন জানান আমরা শত শত অধিকার বঞ্চিত সাংবাদিকের আন্দোলন নিয়ে একশ্রেণীর ফ্যাসিবাদের দালাল চক্র আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীদের অনুমতি ব্যতীরেকে এবং আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন ব্যক্তিগণ আন্দোলনকারীদের নেতা সেজে সরকারের উচ্চপর্যায়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করে যাচ্ছে,যার মূলে রয়েছেন এই জেলা প্রশাসক। তাদের সমন্বয়কদের অনুপস্থিতিতে আন্দোলন নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসলে আন্দোলনকারীরা শক্ত হাতে তা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিহত করবেন বলে গণমাধ্যম কর্মীরা এক বাক্যে জানিয়েছেন।

উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড প্রেস কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সাবেক সদস্য মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত। তিনি তার বক্তব্যে সাংবাদিক সাগর রুনি হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবী করেন।