নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা
নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে এক ভাইয়ের মৃত্যুর পর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসী আয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে অপর দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। একদিকে পরিবারের কর্তাব্যক্তি বাবার মৃত্যু এবং চাচাদের স্বার্থপর আচরণে অকূলপাথারে মৃত ব্যক্তির দুই শিশুসন্তান ও পরিবার। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে সিআইডির তদন্তের ভিত্তিতে দুই ভাইকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
স্ত্রী ছাড়াও মৃত আক্তারের মুসকান (৯) ও মুজাহিদ (১৩) নামে দুই শিশু সন্তান রয়েছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের দেওভোগে পাক্কা রোড এলাকার আক্তার হোসেন নিজের প্রবাসী আয়ের অর্থে ও নিজস্ব মূলধনে ২০১১ সালে আক্তার গার্মেন্টস নামে একটি হোশিয়ারি কারখানা (নীট গার্মেন্ট) চালু করেন। ব্যবসা শুরু করার পর তার আপন দুই ভাই খোরশেদ ও মোশারফকেও কারখানা পরিচালনায় যুক্ত করেন আক্তার। তিন ভাই যৌথভাবেই দেওভোগ পাক্কা রোড খানকা গলিতে ১০ টি সেলাই মেশিনের হেসিয়ারী কারখানাটি পরিচালনা করতো। আক্তারের সরলতা এবং ভাইদের প্রতি বিশ্বাসের কারনে ব্যবসার কাগজপত্রও করেছেন বড় ভাই মোশাররফ এর নামে। আক্তারের জীবদ্দশায় সবকিছু ঠিকঠাক চললেও তার আকস্মিক মৃত্যুর পর ভাইদের অবস্থান বদলে যায়। কারখানার মালিক আক্তারের মৃত্যুর সুযোগে সেই কারখানা ও কারখানার ভেতরে থাকা প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার তৈরি পোশাকসহ মালামাল বিক্রি করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করে ভাই খোরশেদ ও মোশারফ। এক পর্যায়ে মৃত আক্তার হোসেনের স্ত্রী শিউলি বেগম তার প্রাপ্য টাকা চাইতে গেলে তাকে নানাভাবে ভয় ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
মৃত আক্তার হোসেনের স্ত্রী শিউলি বেগম দাবি করেন, কারখানা স্থাপনের সব বিনিয়োগ ছিল আক্তার প্রবাসী আয়ের টাকা। তার সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কারখানার কর্মচারীর দায়িত্বে থাকা ছোট ভাই খোরশেদ কৌশলে টাকা সরিয়ে নেয়। সেই টাকায় খোরশেদ নারায়ণগঞ্জ নয়ামাটি হোসিয়ারী মার্কেটে একটি স্থায়ি দোকান, চর কাশীপুর সাড়ে চার শতাংশ জমি, মাদারীপুরে ২২ শতাংশ জমি সহ একাধিক স্থানে সম্পদ গড়েছেন। যার পুরো অর্থই ছিলো একমাত্র আক্তার হোসেনের হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠানের।
শিউলি বেগম দাবি করেন, আমার স্বামী মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পরিবারের চিন্তা করেছেন। ভাই বোনদের জন্য অকাতরে সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন। কখনো ভাইদের সন্দেহ করেননি। নিজের টাকায় কেনা বসত বাড়িটিও তিন ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। তিনি সবসময় বলেছেন ভাইয়েরা কখনো বেঈমানি করবে না। পূর্ণ বিশ্বাস করেই ব্যবসায়ীক লেনদেনের দায়িত্ব দেন ছোট ভাই খোরশেদকে। অথচ এই সুযোগে পরিকল্পিতভাবে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে খোরশেদ ও মোশারফ। আমার স্বামীর অর্থেই সবকিছু অথচ তাদের স্বার্থপরতায় আজকে আমার সন্তানরাই নিঃস্ব এবং বঞ্চিত।
দেওভোগ পাক্কা রোডের খানকা গলির বাসিন্দা প্রত্যেক্ষদর্শী সেলিম আহমেদ (৬০) বলেন, আমি দেখেছি মৃত আক্তার হোসেন একজন পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন এবং পরিবারের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের জন্য কখনো ভাবেননি, তার ভাইয়েরা দুইটা এতিম বাচ্চাদের প্রতি এমন আচরন করবে কল্পনাও করা যায় না। এতিমদের প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে তাদের সম্পতি আত্মসাৎ করে বসে আছে। এটা দুঃখজনক।
প্রতিকারের জন্য মৃত আক্তার হোসেনের স্ত্রী শিউলি বেগম নারায়ণগঞ্জ মহানগর আদালতের মামলা করলে আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে গত ২০ মে খোরশেদ ও মোশারফকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন আদালত। তবে এখনো অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে দুই আসামি খোরশেদ ও মোশাররফ।
এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ওয়ারেন্টের কপি পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।