ভারতে গিয়ে ‘নিখোঁজ’ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করেনি। কয়েকটি সূত্র বলছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে।
বুধবার কলকাতায় নিউটাউনের ভাড়া করা একটি ফ্ল্যাট থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এমপি আনোয়ারুল আজিম গত ১২ মে কোলকাতা চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। পরদিন চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আর ফেরেননি জানিয়ে জানিয়ে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন আনোয়ারুল আযীমের পরিচিত গোপাল বিশ্বাস। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন।
এদিকে নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন থেকে আনারের মরদেহ উদ্ধারের পর তৎপর রয়েছে দেশটির গোয়েন্দা পুলিশ।
ভারতের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে আনারের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া আনার কলকাতায় গোপাল বিশ্বাস নামের যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাছাড়া ভারতে এমপি আনার কাদের সঙ্গে চলতেন সে ব্যাপারের খোঁজ শুরু করেছে গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গোপাল বিশ্বাসের কাছ থেকে একই ডায়েরি জব্দ করা হয়েছে। সেখানেও কিছু তথ্য থাকলেও তদন্তের স্বার্থে এখনই তা প্রকাশ করা হচ্ছে না।
সঞ্জীবা গার্ডেনের সামনে স্থানীয় বাটুল সরকার নামে এক ব্যক্তি একাত্তরকে জানান, আমরা মঙ্গলবার থেকেই এই বাড়ির সামনে পুলিশের আনাগোনা দেখেছি। তবে ভেতরে কী হয়েছে তা জানার বা বোঝার সুযোগ হয়নি।
এমপি আনারের পরিবহন ও ঠিকাদারি ব্যবসা আছে বলে জানিয়েছে ঝিনাইদহের স্থানীয়রা। পরিবারটিও মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যদিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে হুন্ডি ও স্বর্ণের ব্যবসার কথা বলা হলেও তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের এই এমপির মৃত্যুতে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাশাপাশি কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা।
১২ মে কলকাতার গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন এমপি আনার। ১৩ তারিখে তিনি ডাক্তার দেখাতে যাবে বলে জানান। কিন্তু ওই দিন ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার সময় এমপি আনার একটি ট্যাক্সি বুক করেন। রহস্যজনক কারণে ওই ট্যাক্সিটি গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে না এসে অন্য জায়গায় আসে। সেই ট্যাক্সিটি গোপালও দেখেন নাই।
১৩ মে রাতে এমপি আনার গোপালকে ফোন করে বলেন সঙ্গে কিছু ভিভিআইপি আছে। রাতে খাবেন না এবং বাড়ি ফিরবেন না। তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। ১৫ মে তিনি গোপালকে জানান দিল্লি পৌঁছে গেছেন। সঙ্গে কিছু ভিভিআইপি আছে, ফোন করে যেন বিরক্ত করা না হয়।
১৮ মে এমপি আনারের খোঁজ না পেয়ে মিসিং কমপ্লেইন করেন গোপাল। অনুসন্ধানে গোয়েন্দারা জানাতে পারে ১৪ মে এমপি আনারের লোকেশন ছিল বিহার ও ঝাড়খান্ডেএলাকায়। এরপর ১৪ তারিখে তার লোকশন বিহারে ট্রেস করে গোয়েন্দারা।
এরই মধ্যে একদিন এমপি আনার তার পিএসকে ফোন করলে তিনি তার ধরতে পারেননি। তবে পিএস পরে ফিরতি কল করলে ওই ফোনটি আর রিসিভ হয়নি বলে জানিয়েছেন।
পুলিশ তদন্তে প্রথমে বিহার ও ঝারখন্ডের তার ফোন অবস্থান করছিল। ফোন করলেও না ধরার বিষয়টি ছিল ২০ তারিখের ঘটনা। পুলিশের ধারণা ছিল ফোন তার কাছে নেই। এরমধ্যেই নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করল কলকাতার বিধাননগর পুলিশ।