বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফলে মুসলিম ছেলের সাথে সর্ম্পক ও হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্মগ্রহণ করার অপবাদ দিয়ে এক যুবতি নারী ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই যুবতি ও তার পরিবারকে চার মাসেরও বেশি সময় ধরে একঘরে করে রাখেন স্থানীয় প্রভাবশালী সমাজপতিরা। এছাড়াও যাতায়াতের পথ, প্রতিবেশিদের সাথে কথাবার্তা ও সকল ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন কথিত এ সমাজপতিরা। এতে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন পরিবারটি।
উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামে এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে । এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে শনিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ভুক্তভোগী যুবতি।
স্থানীয় ও ইউএনও কাছে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর ধুলিয়া ইউনিয়নের মঠবাড়িয়া গ্রামের মৃত কার্তিক ঘরামীর মেয়ে ঝুমুর রাণীর (২১) সাথে সদর ইউনিয়নের অলিপুড়া গ্রামের মৃত জিতেন হাওলাদারের পুত্র দিপংকর হাওলাদারের(২৪) বিয়ে হয়। ঝুমুর দীর্ঘদিন ঢাকাতে পোশাক শ্রমিকের করতেন। ঝুমুরের জমানো টাকায় বেশ আয়োজন করেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। স্বামী পিকংকরের দুইলাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দেওয়া হয়। বিয়ের পরপরই ঝুমুর রাণীর এক মুসলিম ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ও মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলে অপবাদ জড়িয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দা বিরেণ ঘোরামি ও ধীরেণ ঘোরামি। সম্পর্কে তারা ঝুমুরের চাচা হয়। এতে বিয়ের দুই দিনের মাথায় স্ত্রী ঝুমুরকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন স্বামী দিপংকর।
এ ঘটনায় গত ১৩ ডিসেম্বর স্বঘোষিত সমাজপতি বিরেণ ঘোরামি, ধীরেণ ঘোরামি স্থানীয় বাসিন্দা মোড়ল গৌতম ও শচিন বিশ্বাসসহ কয়েকজন লোক নিয়ে সালিশ বসায়। সালিশ বৈঠকে ঝুমুর রাণীর এক মুসলিম ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ও মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করে তাকে (ঝুমুর রাণী) ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেন সমাজপতিরা। সমাজে সবার সাথে কথাবর্তা, চলাফেরা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন কথিত সমাজপতিরা। এমনকি ও পরিবারের বাড়িতে যাতায়াতের পথেও বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। বিকল্প পথে চলাফেরা করেন ভুক্তভোগীরা।
বিচার দাবি করে ঝুমুর রাণী প্রিয়দেশ নিউজকে বলেন,‘ ছোট বেলা থেকে গামের্ন্টসে কাজ করেছি। যা বেতন পেতাম তা জমিয়ে রাখতাম। জমিয়ে জমিয়ে তিনলাখ টাকা জমিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে বিয়ে করেছি। অনুষ্ঠান করে বিয়ে হয়েছে। স্বামীকে নগদ টাকা ও স্বর্ণের জিনিস দিয়েছে। তারা (সমাজপতি) মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সংসার শেষ করে দিল। এখন আমার কি হবে, আমি কার কাছে যাব।
ঝুমুরের ভাই কাঁলাচান ঘরামি বলেন, বিরেণ ও ধীরেণ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জমিজমা দখলে নিতে পায়তারা করছেন। জমিজমা দখলে নিতেই আমার বোনের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাদের একঘরে করে রেখেছেন।
একঘরে করে রাখার কথা স্বীকার করে বিরেণ এবং ধীরেণ বলেন,‘ আমরা এককভাবে একঘরে করে রাখিনি। সমাজের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে একঘরে করে রাখা হয়েছে। তাদের অপরাধ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বড় অপরাধ করছেন। আর কিছু বলতে রাজি নন বলে জানান বিরেণ ও ধীরেণ।
স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন দেওয়ান বলেন, ‘এটি অমানবিক কাজ। ভুক্তভোগীরা আমার কাছে এসেছিল। আমি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে বলেছি।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা সত্য হলে এটা বেআইনী কাজ। আমি খোঁজ নিতে ব্যবস্থা নিব।