জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নামে ভুয়া সংগঠন (বাংলাদেশ কনজুমার্স রাইটস সোসাইটি) কর্তৃক জরিমানার নামে চাঁদা আদায় করায় একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
ভোক্তা অধিকারের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং করে, নকল ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে যা প্রচলিত গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়। এর সুফল ও নকল ভেজাল বিক্রয়কারীদের মনের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নামের সাথে সাদৃশ রেখে বিভিন্ন ভুয়া সংগঠন গড়ে উঠে এবং নামে বেনামে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (RJSC) থেকে রেজিস্ট্রেশিন নেয়। এসব সংগঠন বাজার অভিযান ও মোবাইল কোর্টের নামে বাজারে এক ধরণের চাঁদাবাজি করে আসছে। এ সকল প্রতারণা বন্ধের নিমিত্ত ও জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একাধিক বার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে।
গত বছর RJSC তে লিখে এরূপ অনেক সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়েছিলো। কিন্তু সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ কনজুমার্স রাইটস সোসাইটি’ এই নামে এমনি একটি ভুয়া সংগঠন পঞ্চগড় জেলায় ভুয়া টিম নিয়ে ভোক্তা-অধিকার আইন ২০০৯ এর ৪৩ ও ৫৩ ধারায় রিতিমত জরিমানার নামে চাঁদা আদায় করেছে বলে তথ্য পাওয়া যায় এবং এ মর্মে একটি জরিমানা আদায়ের রশিদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তৎপ্রেক্ষিতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরেরর মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক পঞ্চগড় জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ৩ জনকে আটক করে সদর থানায় সোপর্দ করেন এবং এ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রধান কার্যালয়ে পাঠান।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্র্দেশনা অনুযায়ী উক্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে জনাব মোঃ আব্দুর জব্বার মন্ডল, সহকারী পরিচালক, ঢাকা জেলা কার্যালয় বাংলাদেশ কনজুমার্স রাইটস সোসাইটি নামক সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং অধিদপ্তরের জনাব মোঃ মাসুম আরেফিন, উপপরিচালক (অভিযোগ) আরজেএসসিতে গিয়ে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশনের খোঁজ খবর নেন। পরিদর্শনে দেখা যায় বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটি ২০০৫ সালে আরজেএসসি থেকে রেজিস্টেশন গ্রহণ করা হলেও ২০০৬ এর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির হালনাগাদ কোন তথ্য পাওয়া যায় নি এবং তাদের কার্যালয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জনসাধারণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, অধিদপ্তর কর্তৃক ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটি বেআইনিভাবে রশিদের মাধ্যমে যে চাঁদাবাজি করেছে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়াও তিনি এরূপ চাঁদাবাজির বিষয়ে ভোক্তা সাধারণ ও ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহকে সতর্ক থাকার আহবান জানান।
অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন উৎসবের পূর্বমুহূর্তে এরূপ প্রতারক প্রতিষ্ঠানসমূহ তৎপর হয়ে উঠে। তিনি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীবৃন্দকে ভোক্তা অধিদপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে আইন বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাংলাদেশ কনজুমার্স রাইটস সোসাইটি নামক সংগঠনটির প্রতারণার আদ্যোপন্ত তুলে ধরে বলেন, জরিমানার নামে প্রতিষ্ঠানটি চাঁদাবাজির একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যা দেশে প্রচলিত আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এসব কারণে অধিদপ্তর তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তিনি এরূপ চাঁদাবাজির তথ্য অধিদপ্তরের হটলাইন (১৬১২১) এর মাধ্যমে অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য ভোক্তা ও ব্যবসায়ী সাধারণদের প্রতি আহবান জানান।
বাংলাদেশ কনজুমার্স রাইটস সোসাইটি নামক সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার, সংগঠনের সদস্য মোঃ সোহেল ও মোঃ আলমগীর কে সার্বিক অপরাধ বিবেচনায় সতর্ক করে তদন্তের স্বার্থে তলব করা হলে উপস্থিত হবেন মর্মে মুচলেকা গ্রহণ করা হয় এবং প্রধান অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের আইটি ইনচার্জ মোঃ শাহজালাল উদ্দিনকে লিখিত এজহারসহ পল্টন থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।