বাউফল প্রতিবেদক: পটুয়াখালীর বাউফলে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাছে বসতবাড়ির জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় মারধর ও হামলা করে একটি জেলে পবিরারকে ঘর ছাড়া করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অত্যাচার-নির্যাতন ও প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিবারটি। বাড়িটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে কাটাতার ও বাঁশের প্রাচীর দিয়ে।
এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে। প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতকিার হচ্ছেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। তবে ইউএনও বলছেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১২ বছর আগে কচুয়া গ্রামে ২৬ শতাংশ জমি কিনেন জেলে মো. নান্নু প্যাদা (৪২) ও মো. ইয়ানুর বেগম (৩৫) দম্পতি। জমিতে ঘর তুলে ছেলে সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা। তাদের বাড়ির পাশেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম টুকুর বাড়ি।
দীর্ঘদিন ধরে জেলে পরিবারের জমি দখলে নিতে পায়তারা করে আসছিলেন টুকু। জমি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যেতে চাপ দেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা। পরিবার জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন সময় তাদের মারধর ও নির্যাতন করেন তিনি। গত ২০২২ সালের নাজিরপুর ইউপি নির্বাচনের পর জমি দখলে নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি।
প্রায় তিন মাস আগে কাটাতারের প্রাচীর দিয়ে ওই পরিবারের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেন তিনি। বিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করলে পুরো বাড়ির চারপাশ অবরুদ্ধ করে রাখে টুকু ও তার লোকজন। মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয় নান্নু ও ইয়ানুরকে। প্রাণের ভয়ে শৌলা ও দাশপাড়া গ্রামে আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নেন তারা। বর্তমানে তারা কচুয়া গ্রামে ইয়ানুরের বাবার বাড়িতে এক ছেলে ও স্বামী নিয়ে থাকেন।
ভুক্তভোগী ইয়ানুর বেগম বলেন, স্বামী জেলে। আমি গার্মেন্টেসে কাজ করতাম। খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়ে ২৬ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করি। কিন্তু এ জমিতে টুকুর নজর পড়ে। জোর করে জমি দখল করতে চান তিনি। জমি বিক্রি করতে চাপ দেন। আমি রাজি না হওয়ায় চারপাশে বেড়া দিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেন। মারধরে করে বাড়ি ছাড়া করেন। প্রাণের ভয়ে ছেলে, স্বামী নিয়ে বাবার বাড়িতে ভাঙা ঘরে আশ্রয় নিয়েছি।
তার স্বামী নান্নু বলেন, তারা প্রভাবশালী। তাদের অনেক ক্ষমতা। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কথা কেউ শুনে না। মেম্বার, চেয়ারম্যান ও ইউএন’র কাছে গিয়েও বিচার পাইনি। প্রাণে বাঁচতে নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. অলিউল্লাহ বলেন, অসহায় জেলের পরিবারের চলার পথ বন্ধ করে দেয় তারা। মানবিক কারণে ওই পরিবারটির চলাচলের জন্য আমার জায়গা দিয়ে বিকল্প রাস্তা খুলে দেয়। সেই পথও বন্ধ করে দেয় তারা। বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি।
দিদারুল আলম টুকু বলেন, ‘ওই জমি আমার কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। তারা বিক্রি করেনি। পাশের জমি তো আমার। তাই আমার জমিতে আমি বেড়া দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে এসিল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল। তিনি (এসিল্যান্ড ) সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। এবিষয়ে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।