চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ট্রাফিকের টেন্ডাল দেওয়ানহাটের চাঁদাবাজ আব্দুল্লাহ। ট্রাফিক বিভাগের সাথে দীর্ঘদিন যাবত টেন্ডালের কাজ করছেন আব্দুল্লাহ, বর্তমানে টেন্ডাল থাকা অবস্থায় নিজেকে পরিচয় দিয়ে আসছেন তিনিও নাকি সাংবাদিক। ২৫ অক্টোবর বুধবার দুপুরে দেওয়ানহাট ট্রাফিক বক্সে গেলে আব্দুল্লাহকে বসে থাকতে দেখা যায়।
চাঁদাবাজির ব্যাপারে টেন্ডাল আব্দুল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমিও আপনাদের মত একজন সাংবাদিক। আগে গাড়িঘোড়া দেখাশোনা করতাম বর্তমানে তেমন আর দেখাশোনা করছি না। তবে চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি একজন সাংবাদিক। বর্তমানে নিউজের কাজ করে আসতেছি, আপনরা আমার ব্যাপারে ভালো করে তদন্ত করুন। তদন্ত করার পরে আমি যদি অপরাধী হয়ে থাকি সেক্ষেত্রে আপনারা আমার বিরুদ্ধে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আব্দুল্লাহর কাছে নিউজ সংক্রান্ত ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অফলাইন ও অনলাইন কী জিনিস তা বলতে পারেন না। পত্রিকার আইডি কার্ড দেখতে চাইলে আব্দুল্লাহ তার প্রেস আইডি কার্ড দেখাতে পারেননি। অথচ বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে পরিচয় দেন তিনিও সাপ্তাহিক জনতার দলিল নামক একটি পত্রিকার ডাবলমুরিং থানা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। খবর নিয়ে যায় গেছে আব্দুল্লাহ একজন নামধারী ভুয়া সাংবাদিক। আব্দুল্লাহ একজন পেশাদার টেন্ডাল।
আব্দুল্লাহর ব্যাপারে কয়েকজন চালকের কাছে জানতে চাইলে চালকরা বলেন, আব্দুল্লাহ কিসের সাংবাদিক, আব্দুল্লাহ তো একজন গাড়ীর লাইনম্যান। আব্দুল্লাহর কাজ হচ্ছে প্রতি গাড়ী থেকে চাঁদা উত্তোলন এবং মাসোহারা গাড়ী থেকে টাকা উত্তোলন। আমরা ১৫ বছর ধরে গাড়ী চালাচ্ছি কোন দিন দেখি নাই তাকে সাংবাদিক হিসাবে কাজ করতে। এসব ভুয়া সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আপনারা পত্রিকায় রিপোর্ট করেন।
আব্দুল্লাহর ব্যাপারে সাপ্তাহিক জনতার দলিল পত্রিকার বার্তা বিভাগের অপুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রিয়দেশ নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম দেওয়ানহাট এলাকায় আমাদের কোন প্রতিনিধি নাই। যে লোকটি আমাদের পত্রিকার নাম ব্যবহার করছে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেছি।
টেন্ডাল আব্দুল্লাহর ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আব্দুল্লাহ বর্তমানে ৬ জন টি আই এর আন্ডারে টেন্ডালগিরি করেন, দেওয়ানহাট এলাকায় রাজস্ব চলে আব্দুল্লাহর ম্যাক্সিমা গাড়ী থেকে দুই হাজার ও ৩ হাজার করে টাকা উত্তোলন করেন। এসব টাকা চলে যায় ৩জন টি আইদের কাছে। এইসব টেন্ডালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আব্দুল্লাহ যে একজন টেন্ডাল এবং চাঁদাবাজ এব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের সবাই অবগত রয়েছে। বর্তমানে ট্রাফিকের অফিসটা নিজের অফিস বলে বিভিন্ন জায়গায় বলাবলি করে আসছে। এ ব্যাপারে উপরোক্ত কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
আব্দুল্লার ব্যাপারে ১০নং রোডের মালিক সমিতির সহ-সভাপতি বাবুল এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, টিআই প্রশাসক দেলোয়ার, টিআই ডাবলমুরিং মোশারাফ, টিআই অলংকার অমল বিকাশ, টিআই হালিশহর সালাউদ্দিন মামুন, এই তিনজনের নাম ভাঙ্গিয়ে ম্যাক্সিমা বড় তাকিয়া ও অন্যান্য গাড়ি থেকে চাঁদা উত্তোলন করছেন আব্দুল্লাহ। প্রায় ৩ লাখ টাকা কালেকশন করেন প্রতিমাসে।
এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে ১০ নং রোড ও ৩ নং রোড কয়েকজন ডাইভারকে সিঙ্গেল দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেশিরভাগ ড্রাইভার বলেন, এটা আব্দুল্লাহ স্যারের গাড়ি। এইভাবে চাঁদা আদায় করে নাম মাত্র কিছু টাকা ৩ জন টিআইকে কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিজেই আত্মসাৎ করে।
ভুক্তভোগীরা আর ও বলেন, আব্দুল্লাহকে মাসোহারা দেওয়ার পরেও গাড়িগুলো মামলা দিচ্ছিলেন, আব্দুল্লাহর মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ট্রাফিক পশ্চিম অফিস থেকে গাড়ী ছাড়িয়ে আনতে হয়।আব্দুল্লাহ বলে ট্রাফিক পশ্চিম অফিস তার কথায় উঠে আর বসে। আব্দুল্লাহর কাছে মাতলি না করলে সে গাড়িগুলো আটক করে হয়ারানি করে। ৩নং রোড ও ১০ নং রোডের চালক মালিকরা আব্দুল্লাহর কাছে জিম্মি,আব্দুল্লাহর চাঁদাবাজির কারণে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছেন। আব্দুল্লাহর ব্যাপারে কয়েকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও দুই তিন দিন অভিযান পরিচালনা করে একটা দুটো গাড়ী আটক করে। বর্তমানে আব্দুল্লাহর নামে ৫০টি গাড়ী চলাচল করছে, প্রতিটি গাড়ী থেকে ৩০০০/তিন হাজার টাকা করে মাসোহারা নিচ্ছেন আব্দুল্লাহ। ট্রাফিক বিভাগ থেকে আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে যথাযথ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
টেন্ডাল আব্দুল্লাহর ব্যাপারে দেওয়ানহাটের টি আই মোশাররফের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আব্দুল্লাহর ব্যাপারে কোন কিছুই জানি না।
অনুসন্ধানে খবর নিয়ে জানা যায়, দেওয়ানহাট এলাকায় টেন্ডাল আব্দুল্লাহর জ্বালায় ট্রাফিক ও সার্জেন্টরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
সাংবাদিকতার পেশা নিয়ে সচেতন মহলরা বলেছেন, একজন ট্রাফিকের টেন্ডাল কিভাবে সাংবাদিক পরিচয় দেয়,এরা সাংবাদিক সমাজটাকে কলঙ্কিত করছে,একসময় সাংবাদিকতার দায়িত্ব ও নৈতিকতা ছিল বর্তমানে তা দিন দিন,ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এসব নামধারী সাংবাদিকদেরকে কারণে।বর্তমানে মোটরসাইকেল মেকানিং চা বেক্রতা মুদি দোকান মালিক এরাও নাকি সাংবাদিক,একজন সাংবাদিক সরকারের চতুর্থ স্তস্তের লোক,এভাবে সাংবাদিক সমাজকে কলঙ্কিত করতে পারে না,এইসব সাংবাদিককে প্রতিহত করা দরকার সেক্ষেত্রে সাংবাদিক সংগঠন গুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আরও বলেন, আমরা দেখেছি ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত,তখন যে সাংবাদিকতার একটি মান ছিল,২০১০ সালের পর থেকে সাংবাদিকতার মান নেই, সাংবাদিকতার পেশাটাকে কলঙ্কিত করছেন এরা,এব্যাপারে সাংবাদিক সংগঠনগুলো কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এরা সাংবাদিকতার নিতিমালা বোঝে না, বর্তমানে সাংবাদিকতার নামে চলছে অপ-সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতার নৈতিকতা দায়িত্বশীল বলতে কিছুই নেই। সাংবাদিকতা করতে গেলে সর্বনিম্ন ডিগ্রি বা মাস্টার্স পাশ হতে হবে। বর্তমানে সাংবাদিকতায় ক্লাস টু পাশ করে সাংবাদিকতা করছেন, এবং নিজের নাম লিখতে পারে না,এরাও নাকি সাংবাদিক।আজ সাংবাদিক সমাজটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন কিছু অশিক্ষিত নামক সম্পাদকরা। আমি বলব একজন ব্যক্তিকে প্রেস আইডি কার্ড দেওয়ার আগে তার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করুন তারপরে ওই ব্যক্তিকে আপনি আপনার পত্রিকার প্রেস আইডি কার্ডটি দিন, যিনি লিখতে পারে না এক কলম তিনি কিভাবে সাংবাদিক হয়, এ ব্যাপারে কাউন্সিল এর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
২৮ অক্টোবর শনিবার দুপুর ১২টার সময় আব্দুল্লাহর চাঁদাবাজির ব্যাপারে ট্রাফিক আগ্রাবাদ জোনের ডিসি তারেক এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ কী করে? সে কি পুলিশের লোক? ওকে ধরে ফেলব এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।