প্রিয়দেশ নিউজ, ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের এমপি পদপ্রার্থীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকেই একেক আসনে একাধিক এমপি প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে দলীয় কর্মীরাও নানা হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত। এমনই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের সাথে বিভিন্ন জেলায় মনোনয়ন কারা পেতে পারে, সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করা হয়। প্রথম পর্বে ভোলা জেলার ৪টি আসনে কারা মনোনয়ন পেতে পারে, সেই বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। আজকের পর্বে আমরা ভোলা জেলার ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংক্রান্ত খবর জানব।
ভোলা জেলা দেশের ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। বলা হয়, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি- যেকোন সরকারের সময়ই ভোলা থেকে একজন না একজন মন্ত্রী থাকেনই। আওয়ামী লীগের বর্তমান সময়ের জাতীয় রাজনীতিতেও তোফায়েল আহমেদ এবং নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন জাতীয় পর্যায়ের নেতা। তোফায়েল আহমেদ মূল দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থাকলেও এখন অনেকটা কোনঠাসা। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন আওয়ামী যুবলীগের প্রভাবশালী একজন নেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। বোরহানউদ্দিন দৌলতখানের এমপি মুকুল জাতীয় পর্যায়ে তেমন প্রভাবশালী কোনো রাজনীতিবিদ নন। অন্যদিকে সাবেক উপমন্ত্রী জ্যাকবও আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, ভোলা-১ আসনে তোফায়েল আহমেদের মনোনয়ন তেমন একটা নিশ্চিত নয়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, বর্তমানে দলের সাথে তার দূরত্ব বেড়েছে। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে তিনি দলীয় কাজে তেমন একটা অবদান রাখতে পারেন না। অন্যদিকে দলের এখনকার নীতির সাথেও তিনি মাঝেমধ্যে একমত নন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের খেলা হবে স্লোগানের ঘোর বিরোধী তিনি। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথাও বলেছেন তোফায়েল আহমেদ। কিন্তু এরপরও দলীয় সভানেত্রীর সামনেই ওবায়দুল কাদের খেলা হবে স্লোগান দিয়েছেন। এছাড়া গত ১৫ আগস্টে শেখ হাসিনা গণমাধ্যমে তার এক লেখায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন একটি টেলিফোন আলাপের কথা লিখেছেন। সেখানে তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর ফোন রাখতে রাখতে আমি কী করব বলেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। এরপর থেকেই তোফায়েল আহমেদ অনেকটা ব্যাকফুটে রয়েছেন। এতে মনোনয়নের হিসাবনিকাশও পাল্টে গেছে বলে দাবি করা হয়। এখানে ছাত্রলীগের দুর্দিনের কেন্দ্রীয় একজন নেতা মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানা গেছে। তিনি দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে এলাকায় আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারসহ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও সূত্র জানায়।
ভোলা-২ আসনে তোফায়েল আহমেদের স্বজন আলী আজম মুকুলও বাদ পড়তে পারেন। একজন চেয়ারম্যানের হুমকিতে এমপির প্রকাশ্যে কান্নাকাটির বিষয়টি দল ভালোভাবে নেয়নি। এছাড়া তোফায়েল আহমেদ ইস্যুতে তিনিও বাদ পড়তে পারেন বলে জানিয়েছে সূত্র। তোফায়েল আহমেদ না থাকলে কান্নাকাটি তিনি কতটা সামলাতে পারবেন, সেই দিকও ভাবা হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু বিষয় টেবিলে রয়েছে। এখানে শেখ পরিবারেরই এক সদস্যকে মনোনয়ন পেতে পারেন। তিনি আবার যুবলীগেরও কেন্দ্রীয় একজন নেতা।
ভোলা-৩ আসনে বর্তমান এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনই বহাল থাকতে পারেন। তার বিষয়ে বলা হয়, এই আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তাদের কারও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী মেজর হাফিজকে টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। মেজর হাফিজের মতো বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীকে টেক্কা দেওয়ার রাজনৈতিক দক্ষতা ও ক্ষমতা একমাত্র নুরুন্নবী শাওনেরই রয়েছে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বাকিদের তেমন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকায় লালমোহন-তজুমদ্দিনের মনোনয়ন তিনিই পেতে পারেন বলে জানিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ভোলা-৪ আসনে বর্তমান এমপি ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের ভাগ্যের পাশা উল্টে যেতে পারে। নিজের নামে জ্যাকব টাওয়ার করায় তার ওপর নাখোশ দল ও সরকারের হাইকমান্ড। এজন্য প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাকে একপ্রকার ভৎর্সনাও দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দখলদারিত্বসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের একজন সাবেক সচিব এই আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার ওপর হামলা চালানোর বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি দলীয় হাইকমান্ড। এছাড়া একজন সাংবাদিকের সাথে উদ্ধতপূর্ণ আচরণের বিষয়টিও দলীয় সভানেত্রী জানেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সাংবাদিকের সাথে দুর্ব্যবহারের পর তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগপত্র ফাইল আকারে দলীয় সভানেত্রীর কাছে গিয়েছে বলে জানা যায়। সেসব পর্যালোচনা করে এই আসনেও নতুন মুখ আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। সচিবের চাকরিবিধি সংক্রান্ত সমস্যায় আইনী বাধা থাকলে বিকল্প নতুন মুখও রয়েছে বলে জানানো হয়।