পরকীয়ার টানে তিন সন্তানের মায়া ছাড়লেন মা

ভোলা জেলা প্রতিনিধি: ভোলার দৌলতখানে পরকীয়ার টানে তিন সন্তানের মায়া ছেড়ে প্রেমিকের সাথে পাড়ি জমিয়েছে এক মা। চর খলিফা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জুলফিকার আলম ফরহাদ ওরফে ফুয়াদ এর স্ত্রী সাওদা আক্তার মুন্নি পরকীয়ার টানে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে একই ওয়ার্ডের আব্দুর রহমান মন্টুকে বিয়ে করেন বলে জানিয়েছেন মুন্নির বাবা মাওলানা সাঈদ আহমেদ।

মুন্নির পূর্ব স্বামী ফরহাদ তার জীবনের ভালোবাসা ও বিয়ের গল্প বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। রোমন্থন করেন পনেরো বছরের বৈবাহিক জীবনের কথাও। ফরহাদ বলেন, আমি ১৯৯৭ সাল থেকেই তাকে ভালোবাসতাম পছন্দ করতাম। তার সাথে হাটাহাটি আরম্ভ হয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সে তার নানা বাড়ি থেকে লেখাপড়া করত, ওর নানা বাড়ি আর আমাদের বাড়ি একই বাড়ি। স্কুল জীবন শেষে মুন্নি ওর বাবার বাড়ি কুয়াকাটা চলে যায়। আমাদের প্রেম ২০০৮ সালে পরিপূর্ণতা পায়। মুন্নি কুয়াকাটা থেকে ভোলা চলে আসে। সেদিন ১৩/৪/২০০৮ তারিখ আমরা বিয়ে করি। আমাদের ঘরে তিনটি সন্তান। সংসার জীবনে খুঁটিনাটি নিয়ে অনেক সময় কথা কাটাকাটি হয়। সেইবার আমাদের ভিতরে সামান্য কথা কাটাকটি হয়েছিলো, এই সুযোগে সে না বলে আমার বসত ঘর তৈরির জন‍্য জমানো ৮ লক্ষ টাকা এবং তিনভরি স্বর্ণালংকার সহ বাপের বাড়িতে চলে যায়। তিন সন্তানের মা হিসাব করে আমি আর কোনো মামলায় যাইনি। ওর উপর পূর্ণ আস্থা ছিল যে, অভিমান শেষে ফিরে আসবে। আর আসেনি।

তিনি বলেন, এরপর অসংখ‍্যবার কুয়াকাটা যাই আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য। ৭নং লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনসার উদ্দিন মোল্লার মধ্যস্থতায় একটা সমাধান হয়। চেয়ারম্যানের কোনো সিদ্ধান্তই রাখেনি ওর বাবা সাঈদ আহমেদ। একপর্যায়ে আমার বাচ্চাদের সংঙ্গে মুন্নিকে কথা বলা বন্ধ করে দেয় ওর বাবা। এরই মাঝে ওর বাবা এবং ওর মামা ফিরোজের কুটচালে ২৭/৬/২০২২ তারিখের একটি ডিভোর্স লেটার আমাকে পাঠায়। এরপর নিরুপায় হয়ে আমার বাচ্চাদের নিয়ে আসি।

ফরহাদ বলেন, অসুস্থ বাচ্চাকে দেখতে চাইলে এবং আমার সাথে পুনরায় সংসার করতে সম্মত হলে মুন্নিকে নিয়ে গত ২৩ জুন তারিখে বাড়ির উদ্দেশে মোটরসাইকেলে রওয়ানা হই। এদিকে মুন্নির বাবা ছাইদ আহমেদ চারিদিকে ফোন করে জানিয়ে দেয় আমি মুন্নিকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছি। তাদের বাড়ির একটু কাছেই মহিপুর থানা। মুন্নির বাবার টেলিফোন অনুযায়ী মহিপুর থানায় আমার ও মুন্নির জবানবন্দি গ্রহণ করে। সেখানে মুন্নি আমার সাথে সংসার করবে জানালে মহিপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আমাদেরকে ছেড়ে দেয়। আমরা চলে আসি। কিন্তু পথিমধ‍্যে দৌলতখান উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের নৈমুদ্দির হাটে আমার মটরসাইকেলের গতি রোধকরে আমাকে মারধর করে এবং মুন্নিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাঙ্গোপাঙ্গসহ তার মামা ফিরোজ। আমাকে অবরুদ্ধ করে নিয়ে যাওয়া হয় চরখলিফা মৃধা বাড়িতে। সেখানে স্থানীয় মেম্বার সজিব খান বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করে। শেষে থানার পুলিশকে ডেকে এনে মুচলেকা তৈরি করা হয়। মোসলেকা অনুযায়ী মুন্নিকে দেওয়া হয় তার মামা ফিরোজের দায়িত্বে।

এদিকে মাকে দেখার জন্য বাচ্চারা খুব আহাজারি কান্নাকাটি করে। বাচ্চাদেরকে দেখতে দেওয়া হয়নি মায়ের মুখ। মুন্নিকে মামা ফিরোজের দায়িত্বে রাখার নামে দুইদিন দুই রাত রাখা হয় দলিল উদ্দিন খায়ের হাট বাজারে একটি বাড়িতে অন্যরকম এক অবরুদ্ধ জগতে। এ ব্যাপারে আমার সক্রিয়তার কথা জানতে পেরে মুন্নিকে অবরুদ্ধ করে বিশেষ ব্যবস্থাপনা নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকাতে। সেখানে মুন্নিকে বিয়ে দেয় আবদুর রহমান মন্টুর কাছে।

তিনি বলেন, ওরা লোভ-লালসায় ফেলে আমার স্ত্রীর মাথা নষ্ট করে দেয়। মুন্নীকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য ওর মামা ফিরোজ মন্টুর কাছ থেকে লক্ষ্য লক্ষ টাকার বাণিজ্য করার অভিযোগও রয়েছে। মুন্নির বাবার যোগ-সাজশে ষড়যন্ত্র করে আমার সংসারটি নষ্ট করে বিয়ে দিয়ে দেয়। এখন বুঝতে পারলাম সাধারণ বিষয়কে কেন্দ্র করে টাকা অলংকার নিয়ে মুন্নি আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পিছনে এই পরকীয়া।

এদিকে তিন সন্তানের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মাকে দেখার জন্য সন্তানগুলো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।