রাজধানীর বনানীতে নিহত চীনা নাগরিক গাউজিয়ান হুইয়ের প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা একজন বাংলাদেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে।
পাথর ব্যবসায়ী হুইয়ের এর বাইরেও পদ্মা সেতু প্রকল্প এবং পায়রা বন্দর নির্মাণকাজেও বিনিয়োগ রয়েছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি বলছেন, এই চীনা নাগরিকের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তার ‘কাছের মানুষরাই’ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। অচিরেই এই হত্যারহস্য উন্মোচন হবে।
গত বুধবার বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর ভবনের পাশ থেকে গাউজিয়ান হুইয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভবনের পাশের ফাঁকা জায়গায় মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল তার মরদেহ।
৪৭ বছর বয়সী গাউজিয়ান হুই দশ তলা ওই ভবনের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে তার ময়নাতদন্ত শেষে লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
চীনা এই নাগরিককে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ।
তিনি শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন: গাউজিয়ান হুইয়ের গলায় আঁচড়ের দাগ রয়েছে। তার মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে।
বনানী থানার পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে।
গাউজিয়ান হুইগাউজিয়ান হুইগোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন: গাউজিয়ান হুই মূলত পাথর ব্যবসায়ী। পায়রা বন্দর ও পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে বেশ বিনিয়োগ রয়েছে তার। এসব ব্যবসায় বাংলাদেশি ছাড়াও চীনা নাগরিকরাও অংশীদার হিসেবে আছেন।
একজন চীনা নারীকে ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন: বাংলাদেশি এক ব্যক্তি তার সাড়ে ৫ লাখ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী চার কোটি ৬৭ লাখ টাকা) আত্মসাৎ করেছে। আরও অনেকের কাছে তিনি ডলার পাবেন।
বাংলাদেশে কিছু ব্যক্তি তার টাকা ‘মেরে দিয়েছেন’ এবং আরও কিছু টাকা ‘মারার চেষ্টা করছেন’ বলে জানান তিনি।
মশিউর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের দিনও গাউজিয়ান হুই পায়রা বন্দরে বাংলাদেশি ও চীনের পণ্য সরবরাহ করেছেন। তার সম্পদ, অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের সাথে বাংলাদেশি ও চীনের নাগরিকও থাকতে পারে। বাইরের কেউ নন, কাছাকাছি মানুষরাই তাকে হত্যা করে থাকতে পারে।
বনানীর যে বাড়ির পাশে গাউজিয়ানের লাশ পাওয়া যায়, সেই বাড়ির সিসি ক্যামেরা থাকলেও তা বন্ধ পায় পুলিশ।
এ বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মশিউর বলেন: অনেক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা পাওয়া যায় না। কাজ করে বের করতে হয়। আশা করি, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে খুব শিগগিরই কিছু একটা তথ্য জানা যাবে।
নভেম্বরের শেষ দিকে চীনে যাওয়া গাউজিয়ানের স্ত্রী-সন্তান তার মৃত্যুর পর ঢাকা এসেছেন। তারা এখন ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় আছেন বলে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।
লাশ চীনে নেওয়ার বিষয়ে দূতাবাস ও গাউজিয়ানের স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা চলছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন: কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। সেসব বিষয়ে কাজ চলছে।