আব্দুর রহমান নোমান
আজ সোমবার ৮ জুলাই) নাসরিন ট্রাজেডির ২১ বছর। ২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ চাঁদপুরের ডাকাতিয়া এলাকায় প্রায় ২ হাজারের বেশি যাত্রীসহ ডুবে যায়। অতিরিক্ত যাত্রী ও মালবোঝাই করার কারণে মেঘনা নদীতে পানির তোড়ে লঞ্চটির তলা ফেটে যায়। ওই দিন প্রায় ৪ শতাধিক মানুষের সলিল সমাধি ঘটে।
এ ঘটনায় নিহত এবং নিখোঁজ যাত্রীদের বেশিরভাগ লালমোহন, চরফ্যাসন ও তজুমদ্দিনের বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে লালমোহনের ২৬৪ জন, চরফ্যাসনের ১৯৮ জন এবং তজুমদ্দিনের ১৩ জনের পরিচয় সনাক্ত করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে ১১০ জন ছিলেন নারী। নিহত বা নিখোঁজ যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ৩৩ জন রিক্সা/ ভ্যান চালক, ২ জন ফেরিওয়ালা, ৩ জন পোশাক শ্রমিক, ২৪ জন সরকারি চাকরিজীবী,৫৪ জন দিনমজুর, ৩৬ জন কৃষক, ১০ জন ড্রাইভার, ৩৬ জন ব্যবসায়ী, ৩৩ জন ছাত্র, ৬৬ জন গৃহিণী, ৯ জন গৃহকর্মী এবং ৯৬ জন শিশু- বৃদ্ধ।
এই দুর্ঘটনায় ৪০২টি পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তি মারা যান। এসব পরিবারের মধ্যে ১২৮টি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষ সদস্যটি মারা যান। এই দূর্ঘটনায় লালমোহনের মহেশখালীর একই পরিবারের ২৬ জন সদস্য মারা যান। ওই পরিবারের সদস্যরা বিবাহ অনুষ্ঠান উপলক্ষে দলবদ্ধভাবে ঢাকা থেকে এমভি নাসরিন লঞ্চে লালমোহনে আসছিলেন।
দিনটি ভোলাবাসীর জন্য শোকাবহ দিন। ১৯৭০ এর প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের পর ভোলাবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় ভয়াবহ সংবাদ ছিল নাসরিন লঞ্চ ট্রাজেডি। দূর্ঘটনার পরের ২/৩ দিন ভোলার বিভিন্ন নদী, খাল এবং ম্যানগ্রোভ বাগানে ভেসে এসে আটকে থাকা হতভাগ্য যাত্রীদের অনেক মরদেহ পাওয়া যায়। পরিচয় সনাক্ত করতে না পারা পঁচা গলা অনেক মরদেহ নদীর পাড়ে, বেড়িবাঁধের ঢালে কবরস্থ করা হয়।
নাসরিন ট্রাজেডির মধ্য দিয়েই ঘটে যায় লঞ্চ দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। এসময় জীবিত মৃত সব মিলে ৪’শ যাত্রীর সন্ধান মিললেও প্রায় ৮’শ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। দুর্ঘটনার দুদিন পর থেকে ভোলার মেঘনা পরিণত হয়েছিল লাশের নদীতে। সেই ভয়ংকর দৃশ্য মনে করে এখনও শিউরে উঠে ভোলার মানুষ।