
এম.এ কিবরিয়া
পবিত্র রমজান মাস এলেই অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা যেখানে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকেন, সেখানেই এক ব্যতিক্রমী নজির স্থাপন করে চলেছেন এরশাদ উদ্দিন। রমজান মাসজুড়ে ১০ টাকা লিটারে নিজের খামারের গরুর খাঁটি দুধ বিক্রি করছেন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রৌহা গ্রামের জেসি এগ্রো ফার্মের মালিক মো. এরশাদ উদ্দিন। নামমাত্র মূল্যে দুধ পানের সুযোগ পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ।
শনিবার (৮ মার্চ) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, নামমাত্র মূল্যে মাত্র ১০ টাকা কেজিতে জেসি এগ্রো ফার্মের খামারে উৎপাদিত ৩ টন দুধ বিক্রি করছেন। রমজানের প্রথম দিন থেকেই করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামে এরশাদ উদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত জেসি এগ্রো ফার্মে এই দুধ বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা হয়।
পুরো রমজান মাস জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রতিদিন ১০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করা হবে। তবে একজন ব্যক্তি দৈনিক সর্বোচ্চ এক লিটার দুধ কিনতে পারবেন। এভাবে ১০ টাকা লিটার দরে গত চার বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও তার খামার থেকে উৎপাদিত সব দুধ বিক্রি করে দিচ্ছেন জেসি এগ্রো ফার্মের মালিক মো. এরশাদ উদ্দিন। মো. এরশাদ উদ্দিন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, গত পাঁচ বছর আগে এরশাদ উদ্দিন নিজ এলাকায় জে সি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। তার খামারে দুগ্ধ ও মোটাতাজাকরণের তিন শতাধিক গরু রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০টি গরু দুধ দিচ্ছে। খামার থেকে প্রতিদিন ৯০-১০০ লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ রমজান মাসে দামের জন্য দুধ কিনতে পারেন না। তাঁদের কথা ভেবেই খামারটি শুরু করার পর থেকেই প্রতিবছর রমজান মাসে দুধ ১০ টাকা লিটারে বিক্রি করে আসছেন। যে কেউ তার খামার থেকে ১০ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ এক লিটার দুধ কিনতে পারবেন।
দুধ নিতে আসা পার্শ্ববর্তী পুরান চামড়া গ্রামের সিরাজ মিয়া বলেন, গত চার বছর ধরে রোজার সময় এখান থেকে ১০ টাকা কেজি ধরে দুধ নিতাছি। সকালে আসছি ১০ টাকা দিয়া এক লিটার দুধ কিনতে। আমরা অনেক খুশি, কারণ আমাদের মতো গরিব মানুষের ১০০ টাকা লিটার করে বাজার থেকে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব না।
নিয়ামতপুর ইউনিয়নের দেওপুর মোহাম্মদ রবিউল আওয়াল বলেন, বাজারে সব কিছুরই মূল্য অনেক। রমজানে ১০০ টাকা লিটার করে দুধ কিনে খাওয়া আমাদের সম্ভব না। এরশাদ ভাই গত চার বছর ধরে ১০ টাকা করে দুধ দিতেছে আমাদের। এই দুধ দিয়েই আমরা সেহরি খাব। আমাদের সকল বিপদেই এরশাদ ভাই পাশে থাকেন।
জেসি এগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক হোসেন মোহাম্মদ রিয়াদ জানান, এক লিটার কিংবা দুই লিটার নয়। পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে দরিদ্র মানুষের মধ্যে রোজার প্রথম দিন থেকে নামমাত্র মূল্যে তিন হাজার লিটার দুধ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. এরশাদ উদ্দিন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে চড়ামূল্য দুধ কেনা দরিদ্র মানুষের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তাই কম দামে দুধ পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। প্রত্যেকের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে। তবে কারও কাছে টাকা না থাকলে তাকেও ফিরিয়ে দেয়া হয়না।
জেসি এগ্রো ফার্মের মালিক মো. এরশাদ উদ্দিনের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হলে তিনি জানান, রমজান মাসে দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। এক লিটার দুধ ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তাই নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে দুধ কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। এ বিষয়টা চিন্তা করেই তাদের জন্য পাঁচ বছর ধরে রমজান মাসে ১০ টাকা করে বিক্রি করে আসছি। প্রথম রমজান থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে এ উদ্যোগ শুরু করার সময়ে আমি ভেবেছিলাম, দুধ ফ্রি দিব। কিন্তু ভাবলাম রমজান মাসে দুধ ফ্রি দিব কে কি মনে করবে। তাই আমি সামান্য রেইটে ১০ টাকায় বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেই।
উল্লেখ, মো. এরশাদ উদ্দিন নিজের নামে একটি মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন করে এলাকার হতদরিদ্র, প্রান্তিক ও সাধারণ মানুষকে নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। মানুষের যেকোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করে আসছেন তিনি। এর আগে গত বছরে দুধ ও মাংস উৎপাদনের জন্য ডেইরি আইকন সম্মাননা পেয়েছিলেন মো. এরশাদ উদ্দিন।