৫৭ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন সেই আব্দুল হান্নান

কথাতেই আছে ‘শিক্ষার কোনো বয়স নেই’। অবশ্য আব্দুল হান্নানও এমনই বলেন। এই প্রবাদ শুধু মুখে মুখে নয়, করেও দেখালেন তিনি। ৫৭ বছর বয়সে করলেন এইচএসসি পাস। এই বয়সে এইচএসসি পাসের খবরে এলাকায় দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের কামাত গ্রামের এই বাসিন্দা অনেক সমালোচনা সহ্য করে সফল হন। এর আগে ৫৪ বছর বয়সে করেছিলেন আরেক বাজিমাত। এত বয়সে এইচএসসি পাস করায় এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে মানুষের মাঝে। তার এ কৃতিত্বে খুশি পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।  

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ফল প্রকাশ হলে জানা যায়, হান্নান জিপিএ-৩.২৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ‘এমটিএমকে আনক টিবিএম কলেজ’ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

অনুভূতি জানতে কথা হয় আব্দুল হান্নানের সঙ্গে। বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স হয় না। তাই শিক্ষাগ্রহণে বয়স বাঁধা হতে পারে না। ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। আর আমি এ শিক্ষা নিয়ে এলাকার গরীব ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে চাই।

তিনি বলেন, আমার পরীক্ষার ফলে এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। শিক্ষা ছাড়া দেশ ও জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে। তাই আপনারা আপনাদের (বাবা-মায়েদের আহ্বান জানান) সন্তানকেও স্কুলে পাঠান।

আব্দুল হান্নান জানালেন, এই বয়সে লেখাপড়ায় ধাপে ধাপে বাঁধা ছিল। নিন্দা ও বিদ্রূপও ছিল। তবুও মনোবল অটল ছিল তার। শিক্ষাগ্রহণে বয়স কোন বাঁধা নয়। এবার উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী তিনি। ‘ল’ কলেজে ভর্তি হতে চান বলেও জানালেন।

এদিকে আব্দুল হান্নানের এইচএসসি পাসে এলাকায় ব্যাপক হইচই পড়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়া-প্রতিবেশী এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে অভিনন্দনে ভাসিয়েছেন। উৎসাহ দিচ্ছেন সামনে যেন আরও ভালো কিছু করতে পারেন। সেই আশাবাদও ব্যক্ত করেন এলাকাবাসী।

বিনোদপুর  ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, আমি নিজেও একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলাম। আমি জানি শিক্ষার মর্যাদা। এই বয়সে আব্দুল হান্নান যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সেটা অবশ্যই অনুকরণীয়।

শিক্ষক সমাজ ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ঘটনাটি গ্রামের সুনাম বাড়িয়েছে।আজকের দিনে তিনি হতে পারেন শিক্ষা মনোযোগীর উদাহরণ। এখন তাকে দেখে অন্যরাও উৎসাহী হবে।নতুন প্রজন্মের কাছে এখন তিনি উদাহরণ।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২২ সালে ৫৪ বছর বয়সে এসএসসি পাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন এই আব্দুল হান্নান। কয়েকটি সংগঠনের বিশেষ সম্মাননাও পেয়েছিলেন তখন।

শুরুটা ছিল ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণের।  শিশু বয়সেই বাবা হারান আব্দুল হান্নান। এরপর আশ্রয় পান চাচার বাড়িতে। মাত্র ২০ বছর বয়সে বিয়ে করে সংসারের হাল ধরেন। তবে লেখাপড়া করতে না পারার কষ্টটা মনের মধ্যে থেকে যায়।

আব্দুল হান্নান পেশায় একজন কৃষক হলেও বয়সের ভারে তেমন কাজ করতে পারতেন না। তাই ২০১১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কোর্টে আইনজীবির সহকারী হিসেবে শুরু করেন মুহুরির কাজ। কিন্তু এ পেশায় যোগদান করে পরিচয় পেতে ন্যূনতম এসএসসি পাসের সনদ লাগে। এ জন্য ২০১৮ সালে তেলকুপি জমিলা স্বরণি কারিগরি ও ভোকেশনাল স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। অংশগ্রহণ করেন ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায়। ৫৪ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪.১১ পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। আর এবার এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন সেই আব্দুল হান্নান।