২০১৬ সালের রমজানের শেষ দিকে মানুষ যখন তারাবীহ নামাজ আদায় করছিল, তখন একদল পথভ্রষ্ট জঙ্গিবাদী তরুণ বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কতিলক দেয়ার চেষ্টা করছিল। তারা রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দেশি-বিদেশি বহু মানুষকে হত্যার তাণ্ডবলীলায় মেতে উঠেছিল। এর মাধ্যমে তারা কলঙ্কতিলক লাগাতে পেরেছিল ঠিকই, কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি।
বাংলাদেশ শুরু থেকেই এ জঙ্গি হামলাকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করেছিল। শেষ পর্যন্ত ওই হামলায় জড়িত ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে সাক্ষর রাখলো।
তিন বছর আগের ঈদুল ফিতরের উৎসবের পূর্বে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ১ জনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বিচার শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় বুধবার বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করলেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল।
এই মামলার রায়ে স্বাভাবিকভাবেই দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ খুশি হয়েছেন। তবে আমরা এই রায়ে পূর্ণরূপে খুশি হতে পারিনি। কারণ, এই হামলার আরও কিছু মাস্টারমাইন্ড জামিনে রয়েছেন, এতে তারা পার পেয়ে গেছেন বলেই আপাতদৃষ্টিতে আমাদের শঙ্কা। তারাও তাদের অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আসবেন বলে আমরা মনে করি।
এছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে ৭ অপরাধী তাদের দণ্ড বুঝে পেলে জঙ্গিবাদবিরোধী কোটি কোটি মানুষ স্বস্তি পাবেন। এ বিষয়টি জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধে একটি মাইলফলক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে বলেই আমরা মনে করি।
তবে এই রায়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলার যে কোনো উপায় নেই, তা জঙ্গিদের নেটওয়ার্কেই অনুমেয়। রায় ঘোষণার পর আদালতের এজলাস থেকে বের হওয়ার সময় জঙ্গিদের মাথায় আইএসের লোগো সম্বলিত টুপি লক্ষ্য করা গেছে। তাদের নেটওয়ার্ক যে এখনও নিশ্চিহ্ন হয়নি এ ঘটনায় তা বুঝা যায়। আদালতে এই টুপি কীভাবে আসলো তা খুঁজে বের করার পাশাপাশি জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ধ্বংসে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
এর পাশাপাশি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বরাবরের মতো জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধে সফল হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ কখনোই জঙ্গিবাদের কাছে হার মানতে পারে না।