সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়স বাড়তে পারে

অবশেষে সুখবর পেতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত চাকরিপ্রত্যাশীরা! প্রায় এক দশক ধরে চলমান এ আন্দোলনের কোনো সুরাহা রাজনৈতিক সরকারের আমলে না হলেও বিষয়টি এখন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের পাশাপাশি অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোরও প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ঠিক কত বছর বয়সসীমা বাড়তে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

প্রচলিত আইন অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সাধারণ বয়স ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। এ সীমা ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও এ দাবিতে বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছে তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি পর্যালোচনার জন্য গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি কমিটি গঠন করে সরকার। সেই কমিটির দায়িত্ব ছিল ৭ দিনের মধ্যে চাকরিপ্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়ন করে জমা দেওয়া।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রণয়ন করে এরই মধ্যে জমা দিয়েছে ওই কমিটি। তারা বিদ্যমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হয়ে সেই প্রতিবেদন এখন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৌঁছেছে। বিষয়টি এখন প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের অপেক্ষায়। তার সিদ্ধান্ত এলে চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে সরকার। অবসরের বয়স বাড়লে অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে গেজেট।

তবে পর্যালোচনা কমিটি ঠিক কত বছর বয়স বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কিংবা কত বছর বাড়ানো হচ্ছে—সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু এখনো জানা যায়নি। এ নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। বিষয়টি স্পর্শকতার হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা এখনই মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।

বয়স বাড়ানোর দাবি পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়েছিল সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে। তিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনেরও প্রধান। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। বয়স বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে গতকাল তাকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত এক দশকে চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে যৌক্তিকভাবে বিবেচনার পরিবর্তে বরাবরই আন্দোলনকারীদের ওপর নানাভাবে দমনপীড়ন চালিয়েছে। তবে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখায় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোকপাত করেছে বিএনপি। সরকারে গেলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

এ ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স প্রাথমিকভাবে আগামী দুই বছরের জন্য ৩৫ বছর করে পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। এ ছাড়াও অবসরের সময়সীমা ৬২ করারও প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। শুধু তা-ই নয়, সরকারি চাকরিপ্রার্থীরা যেন বিনামূল্যে আবেদন করতে পারে, সে দাবিও জানিয়েছে জামায়াত।

শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়; চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়স ৬৫ নির্ধারণের সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ)। ফলে প্রবেশ ও অবসরের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কর্মকর্তাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে চলেছে সরকার। এতে ধারণা করা হচ্ছে প্রবেশের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবসরের বয়সসীমাও বাড়ছে।

এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হলে সরকারে আন্দোলনকারীদের ঝামেলা থেকে মুক্ত হবে। আর অবসরের বয়সসীমা বাড়ালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের প্রতি অনুগত থেকে নতুন উদ্যমে কাজ করবেন।