বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিবেদক: বাউফলের কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডুবা বাজারের দক্ষিণ পাশের খালের ওপর প্রায় সাত বছর আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর দুই পাশে নেই কোনো সড়ক। সড়ক না থাকায় এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না সেতুটি। এতে নিশ্চুপ দাড়িয়ে আছে সড়কবিহীন অলস এ সেতু।
সেতুর সুফল বঞ্চিত এলাকাবাসী বলছেন, সড়ক না থাকার পরেও সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতু নির্মাণের সাত বছর পার হলেও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। চলাচলের সড়ক না থাকায় কখনো চলেনি কোনো যানবাহন। সড়ক বিহীন সেতু নির্মাণ করা সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। এদিকে সেতুর ব্যবহার না হলেও নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারনে বিভিন্ন অংশের পলেস্তার খসে পড়ে রড বেড়িয়ে গেছে।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের মল্লিকডুবা বাজারের দক্ষিণ পাশে মল্লিকডুবা-ভরিপাশা গ্রামের সীমানা খাল। খালের পশ্চিম মাথায় উত্তর-দক্ষিণমুখী সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর দক্ষিণ পাশে পুরোপুরি ফাঁকা, বন জঙ্গলে ভরা। নেই কোনো সড়ক পথের অস্তিত্ব। সেতু থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে নুরাইপুর- ভরিপাশা পাকা সড়ক রয়েছে। আর সেতুর উত্তর পাশে মানুষ চলাচলের উপযোগী সরু মাটির কাচা রাস্তা রয়েছে। যা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। ওই মাটির রাস্তা দেড় কিলোমিটার দুরে কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের কাছে গিয়ে পাকা সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, কেশবপুর ইউনিয়নের উত্তর দিকে অবস্থিত কেশবপুর, বাজেমহল ও মল্লিকডুবা গ্রামের সাথে ইউনিয়নের দক্ষিণের নুরাইপুর বাজার, ভরিপাশা, তালতলি গ্রামে যোগাযোগের জন্য সহজ ও কম দূরত্বের পথ এটি। এই পথে সেতু নির্মাণ করা হলেও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। যার কারণে সেতুটি কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প বেশি দূরত্বের পথ দিয়ে এসব গ্রামে চলাচল করা হয়ে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিব হাওলাদার (৪৫) বলেন, সেতু আছে, সড়ক নাই। তাতে কি লাভ হলো। সড়কের অভাবে গাড়ি চলতে পারে না। যার কারণে আমাদের বিকল্প বেশি দূরত্বে পথে চলাচল করতে হয়। আরেক বাসিন্দা মো. আনোয়ার খলিফা বলেন,‘ সেতু নির্মাণের সাত বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। এই সেতু নির্মাণ করা সরকারের টাকা অপচায় ছাড়াই কিছু না।
মাহাবুবুর রহমান (৫৬) নামে এক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুটি দিয়ে মানুষ কিংবা যানবাহন কখনো চলাচল করেনি। মাত্র সাত বছরে সেই সেতুটির ঢালাইয়ের ইট-সুরকি খসে পড়ছে, রড বেড়িয়ে গেছে। তিনি নিম্ন মানের কাজের জন্য ঠিকাদার ও তদারক কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আসাদুল হক জুয়েল বলেন, সেতু নির্মাণের পর যদি যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করা হতো, তাহলে ভরিপাশা ও তালতলি গ্রামের মানুষ ওশিক্ষার্থীরা সহজে মল্লিকডুবা ও কেশবপুর বাজার, কেশবপুর কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে পারত। আর মল্লিকডুবা গ্রামের মানুষ খুব সহজেই নুরাইনপুর বাজার ও শিক্ষার্থীরা নুরাইনপুর কলেজে যাওয়া আসা-করতে পারত।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩৬ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্থ এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। এমনটা হলে তা খুবই দুঃখজনক। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।