সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখন হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হবে।
রোববার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবিধান সংস্কারবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, লিখিত প্রস্তাবনা নেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনই বলতে পারছি না কী ধরনের প্রস্তাব আমরা পাব। সব রাজনৈতিক দল, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করব। তাদের বক্তব্য শুনব। লিখিত বক্তব্য চাই। তারপর সে অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে সংবিধান সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস ও পুনর্লিখন কোনটা করা হবে।
কমিশনের প্রস্তাব বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করবে নাকি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার করবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, আন্দোলন চলাকালে এক দফা ঘোষণার সঙ্গে আগের সব রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাতিল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমি সরকার বা সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে এখানে বলতে চাইছি না প্রস্তাবগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে। তবে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বলতে পারি, বাস্তবায়ন অবশ্যই বর্তমান সরকার করবে।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশন বলেছে যেসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা দল জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানের সময় সক্রিয়ভাবে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থেকেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ড ও নিপীড়নকে সমর্থন করেছে, ফ্যাসিবাদী কার্যক্রমকে বৈধতা দিতে সাহায্য করেছে, কমিশন সেসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরিতে যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, এই কমিশনকে "জনপ্রতিনিধিত্বশীল ও কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ক্ষমতায়নের উদ্দেশে দেশের বিরাজমান সংবিধান পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত" করবেন এবং সে বিবেচনায় কমিশন সংস্কারের পরিধি ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করবে।
তিনি জানান, সংস্কারে অন্তর্ভুক্ত হবে বর্তমান সংবিধান পর্যালোচনাসহ জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
এছাড়া তিনি সাংবিধানিক সংস্কারের সাতটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করেন। তার অন্যতম হলো- দীর্ঘ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিশ্রুত উদ্দেশ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আলোকে বৈষম্যহীন জনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো, রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বস্তরের জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ব্যবস্থা।
অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলো হলো-ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থার উত্থান রোধ, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানের বিকেন্দ্রীকরণ ও পর্যাপ্ত ক্ষমতায়ন এবং রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক এবং আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের কার্যকর স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত