লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১২ পরিবেশক (ডিলার) আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় তাদের নামে বরাদ্দ সেপ্টেম্বর মাসের ১৮৮ টন ৬৪০ কেজি চাল খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করা হয়নি। এতে বন্যা পরবর্তী ছয় হাজার ২৮৮ জন দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ ৩০ কেজি করে চাল বঞ্চিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
সূত্র জানায়, রামগতি উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩৯ জন পরিবেশক রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ডিলারদের অনেকে আত্মগোপনে চলে যান।
বুধবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ২৭ জন পরিবেশক খাদ্য গুদাম থেকে ৩৮৮ টন ৫০০ কেজি চাল উত্তোলন করেন। ১২ হাজার ৯৫০ জন হতদরিদ্র কার্ডধারী মানুষ এ চাল পাবেন। বাকি ১২ পরিবেশক ১৮৮ টন ৬৪০ কেজি চাল উত্তোলন করেননি। এতে চাল বঞ্চিত হয়েছেন ছয় হাজার ২৮৮ জন সুবিধাভোগী। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের নুর আলম মানিক, আবু সাঈদ, নুরুল হুদা রুবেল, আজাদনগর এলাকার ইব্রাহিম, চর আলেকজান্ডারের মাহবুবুর রহমান, হেলাল উদ্দিন, চর আবদুল্লাহর জসিম উদ্দিন বাবুল, নোমান হোসেন, নাজিম উদ্দিন, চর আলগীর মো. মহসিন, চর রমিজের হুমায়ুন কবির ও মো. রায়হান চাল উত্তোলন করেননি। এতে চরপোড়াগাছা, চর আবদুল্লাহ, চর আলেকজান্ডার, চরআলগি ও চর রমিজের ছয় হাজার ২৮৮ জন কার্ডধারী চাল বঞ্চিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পরিবেশক জানান, তিনি নির্দিষ্ট সময়ে চাল উত্তোলন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপির এক নেতা তাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ করো, পরিণাম ভালো হবে না।’ এজন্য আমি চাল উত্তোলন করতে পারিনি। এখন এর খেসারত দিতে হবে অসহায় গরিবদেরকে।
আজাদনগর গ্রামের মাকসুদা বেগম বলেন, স্বামীও বেকার। না খেয়ে দিন পার করতে হয়। খুব কষ্টে রয়েছি। এখন বাজারে চালসহ অন্যান্ন পন্যের দাম বেশি। সরকার আমাদের সুবিধার্থে ১৫ টাকা করে চাল বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু ডিলারের দোকানে ৩-৪ দিন গিয়েও চাল পাইনি। শুনেছি আমাদের বরাদ্দের চাল বাতিল হয়ে গেছে। এখন আমরা গরীবরা কি করবো?
পরিবেশকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রামগতি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন বলেন, ওই ডিলাররা নিজেরাই পলাতক। আমরা রাজনীতিতে স্ব অবস্থানে বিশ্বাস করি।
রামগতি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) নাইমুল করিম টিটু সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১২ জন ডিলার চাল উত্তোলন করতে পারেননি। এখন আর চালগুলো উত্তোলনের সুযোগ নেই। যারা উত্তোলন করেছেন, সেগুলো স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিতরণ করার প্রক্রিয়া চলছে।