মোমিনুর রহমান , মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় জমে উঠেছে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘ঘিওর নৌকার হাট’। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা আর চলাচল নৌকা ছাড়া যেন অনেকটাই অচল।
সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা, সপ্তাহখানেক ধরে অবিরাম বর্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও পদ্মা-যমুনা, কালীগঙ্গা, ইছামতি ও ধলেশ্বরীসহ ছোট বড় বেশ কয়েকটি নদীবেষ্টিত জেলা মানিকগঞ্জে ইতিমধ্যে বর্ষার পানি প্রবেশ কারার ফলে মানুষ নৌকা কেনার জন্য ভিড় করছেন ঘিওর হাটে।
সরজমিনে উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহের মাঠে নৌকার হাটে গিয়ে দেখা যায়, জায়গার সংকুলান না হওয়ায় পাশের ডিএন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো রয়েছে হাজারো নৌকা। ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম পুরো এলাকা। সাধ্যের মধ্যে সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্য রয়েছে নানা ধরনের নৌকা।
এ এলাকার নদী-নালা, খাল-বিল পানিতে ভরপুর। বিশেষ করে ঘিওর, হরিরামপুর, শিবালয়, ও দৌলতপুর উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা নিচু। পদ্মা-যমুনার সঙ্গে এই চারটি উপজেলার সরাসরি সম্পর্ক থাকায় সাধারণ বর্ষাতেই নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এই সব অঞ্চলের মানুষ বন্যার পানি আসার আগে থেকেই নৌকা প্রস্তুত করে রাখেন। এসব এলাকায় বর্ষা মৌসুমে একমাত্র ভরসা হলো নৌকা।
হাটে প্রতিদিন লাখ টাকার নৌকা বেচাকেনা হয়। তবে সাপ্তাহিক হাট বুধবারে সবচেয়ে বেশি নৌকা বেচাকেনা হয়ে থাকে। প্রতি হাটে ২০০ থেকে ৩০০ টি নৌকা বেচাকেনা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলামিন বলেন, আষাঢ় মাস চলছে। সাধারণত এই সময় সচারাচর বন্যার প্রকোপ দেখা দেয়। ঘিওর নৌকার হাটে এ সময় ভিড় লেগেই থাকে।
ঘিওর বাজারের কাঠমিস্ত্রি আশিষ সূত্রধর বলেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমের অপেক্ষায় থাকি। সপ্তাহে আমাদের কারখানা থেকে কমপক্ষে ২০-২২টি নৌকা হাটে নেওয়া হয়। বর্তমানে কাঠ, লোহা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকা তৈরিতে খরচ বেড়েছে। আমরা সাধারণত জামরুল, রেইনট্রি, আম, কদম, শিমুল, বৈন্যা, ডোমরা ইত্যাদি কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি, কোশা ও স্টিল বডির নৌকা তৈরি করছি।
হাটে নৌকা কিনতে আসা আবুল মিয়া বলেন, আমাদের গ্রামটি খুবই নিচু। সামান্য বর্ষাতেই রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। বর্ষার সময় একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। পানি বেড়ে রাস্তায় উঠেছে। নৌকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই এই হাট থেকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে যাচ্ছি।
ঘিওর নৌকার হাট পরিচালনা কমিটি সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জের নিচু এলাকাগুলোতে বর্ষার শুরুতেই পানি আসে। নিত্যদিনের যাতায়াত ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে তখন প্রয়োজন হয় নৌকার। আর এসব প্রয়োজন মেটাতে ঘিওর হাটের ঐতিহ্য ২০০ বছরের অধিক। এখানে সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মানুষ নৌকা ক্রয় বিক্রয় করে থাকেন।
ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান জনি বলেন, এই নৌকার হাটটি আমাদের জেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। আমার জন্মের পর থেকে এই নৌকার হাটটি দেখে আসছি। এই হাটের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটে নৌকা কিনতে আসে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
ঘিওর উপজেলাসহ আশপাশের প্রায় ১০টি উপজেলার মানুষ এই হাট থেকে নৌকা কিনে নেয়।যদি সরকারি ভাবে নৌকার কারিগররা ঋণ পেতো তাহলে ঘিওর হাটে নৌকার ঐতিহ্য তারা ধরে রাখতে পারবে ।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত