ভোলা সদর উপজেলা ৩নং পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনে ইউপি সদস্য হোসনেয়ারা বেগমের স্বামী এফজাল হোসেন সোহেলের (৩৭) ইয়াবা সেবনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকাল থেকে ফেসবুকে ইয়াবা সেবনের ছবি প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে।
সোহেল ৩নং পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরপাতা গ্রামের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে। তার রোম্মান ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে। তাঁর প্রথম স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম ২০২২ সালে ৩নং পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী আসন থেকে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন।
হোসনেয়ারা বেগম ব্যতীত তাঁর আরও স্ত্রী রয়েছে। তার প্রথম স্ত্রীর নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যান তিনি। তখন আরেক ডিভোর্সি নারীকে পছন্দ করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েকমাস পর কৌশলে ওই স্ত্রীকে তালাক দিতে গিয়ে ফেঁসে যান তিনি। এরপর আর তাকে তালাক দিতে পারেননি। বর্তমানে ওই স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তাকে নিয়ে শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। এদিকে তাঁর প্রথম স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগমকে সম্প্রতি তিনি ডিভোর্স দিয়ে দেন।
জানা গেছে, মাস দুয়েক আগে পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. হারুন, দফাদার মো. ইউসুফ ও তার শশুর ইসমাইল মোল্লার উপস্থিতিতে তিনি হোসনেয়ারা বেগমকে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে তালাক দেন। এসময় তাঁর শশুর ইসমাইল মোল্লা তাকে বাধা দিলে তার উপরও তিনি চওড়া হন। তাকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সোহেল ইয়াবার ব্যবসা ও সেবন করে আসছে। তার কারণে এলাকার যুবসমাজ আজ ধ্বংসের মুখে।
তার এক নিকটাত্মীয় জানান, তিনি সবসময় মাদক সেবন করে তাল-মাতাল থাকেন। কখন কাকে কি বলেন, তা নিজেও জানেন না। তার প্রথম স্ত্রীকে যখন তিনি তালাক দিয়েছিলেন, তখন তিনি মাতাল ছিলেন। নেশা করে তাল-মাতাল থাকা অবস্থায় তিনি হোসনেয়ারাকে তালাক দিয়েছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৈয়দ লাহিড়ী বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, সৈয়দ লাহিড়ী বাজারে সোহেলের একটি অফিস আছে। অফিসটি দোতলা। ওই অফিসটি বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। এছাড়াও অফিসটিতে গোপনীয় দরজা রয়েছে। সেই অফিসেই বসে তিনি ইয়াবা সেবন করেন। সম্প্রতি তিনি চেয়ারম্যান বাজার নামে একটি বাজারে আরেকটি অফিস নিয়েছেন।
ওই ব্যবসায়ী জানান, ভাইরাল হওয়া ছবি সৈয়দ লাহিড়ী বাজারের অফিসের ছবি। ওই অফিসে বসে তিনি নিয়মিত ইয়াবা ট্যাবলেট খেতেন। তিনি যখন ইয়াবা সেবন করতেন, তখন অফিসের সকল দরজায় তালা মেরে রাখতেন। বাহির থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ তাকে ধরতে আসলেও তিনি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সবকিছু দেখতেন।
ওই বাজারের আরেক যুবক জানান, সোহেলের সঙ্গে তার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সোহেল খুব কৌশলে মাদক সেবন করেন। মাদক সেবনের পাশাপাশি তিনি মাদক সাপ্লাইও করেন। কক্সবাজার এবং টেকনাফ থেকে ইয়াবা এনে তিনি তা বরিশাল ও চরফ্যাশনে সাপ্লাই দেন। ঠিকাদারি কাজের আড়ালে তিনি মাদক সাপ্লাই করে আজ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিছুদিন আগে ভোলা সদর থানায় নবনিযুক্ত ওসিকে তিনি ফুলেল তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। সেই ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে এফজাল হোসেন সোহেল বাঘার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ইয়াবা সেবনের ছবিটি তাঁর তা স্বীকার করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ইয়াবা যখন তিনি সেবন করেছিলেন। তখন কে বা কারা তার ছবি তুলেছিল, তা তিনি জানেন না। এই বিষয়ে তিনি নিউজ না করতেও সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
জানতে চাইলে ৩নং পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম জহির জানান, সোহেলের ইয়াবা সেবনের বিষয়টি তিনি জানেন না।
ভোলা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এর অফিসার ইনচার্জ মো. এনায়েত হোসেন জানান, ডিবি পুলিশ গোপনে তদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত