টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ সমমনা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে নিজস্ব একটি পেটোয়া ও সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তাদের কাজ ছিল ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, আর এই অর্থ আদায়ের নেশায় তারা হয়ে উঠেছিলেন নির্মম। দাবি করা অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে টার্গেট ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের নামে দেওয়া হতো মামলা। এখানেই শেষ নয়, প্রদীপের আক্রোশ থেকে রেহাই পেত না ওই পরিবারের নারী, বৃদ্ধ, কিশোরীরা। করা হতো যৌন নির্যাতনও।
কক্সবাজারে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সম্পর্কে মামলার অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
৩১ জুলাই এ নির্মম ঘটনার এক বছর পূর্ণ হবে। গত বছরের এই দিনে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে খুন হন এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।
তবে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও চলমান বিধিনিষেধে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ মামলায় বাদীপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণের যে দিন ছিল, তা-ও পেছানো হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, সিনহা হত্যা মামলার আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলেই রায়ের দিকে যাবেন আদালত।
এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। ওসি প্রদীপ এবং কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে জবানবন্দি দেননি। তদন্তে উঠে এসেছে, সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন। এই কাজ তার নেশা ও পেশা হয়ে উঠেছিল।
ঘটনার বর্ণনায় অভিযোগপত্রে উল্লেখ্য আছে, মেজর (অব.) সিনহা ভ্রমণকাহিনি-ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র তৈরির জন্য গত বছরের ৩ জুলাই তিনজন সহযোগীসহ কক্সবাজারে যান। টেকনাফে কাজ করার সময় মানুষের মুখে সাবেক ওসি প্রদীপের নির্যাতন-নিপীড়নের কথা জানতে পারেন। পরে বিষয়টি প্রদীপের কাছেও চলে যায়। কয়েক দিন পর প্রদীপের সঙ্গে সিনহা রাশেদের দেখা হয়, প্রথম দেখাতেই ওসি প্রদীপ সিনহাকে হুমকি দেন। সিনহা সম্পর্কে বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পরিদর্শক লিয়াকত আলীকেও জানান। পরে থানায় সোর্সদের সঙ্গে গোপন মিটিং হয়। তারা পূর্বপরিকল্পনা মতে সিনহাকে ডাকাত সাজিয়ে গণপিটুনি দেওয়ারও চেষ্টা করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সিনহাকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রাত ৯টা ৩০ মিনিটে পরিদর্শক লিয়াকত গুলির ঘটনাটি পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদুর রহমানকে জানান। তখনো সিনহা জীবিত ও সজ্ঞান ছিলেন। গুলিবিদ্ধ শোনার পরও দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য কোনো নির্দেশনা দেননি তিনি।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, সিনহা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীদের শনাক্ত করার বিষয়েও পুলিশ সুপারের তদারকির দায়িত্ব পালনে আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অন্য একটি অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, প্রদীপ কুমার দাশের ঘুষের টাকায় কোটিপতি হন তার গৃহিণী স্ত্রী চুমকি। দুদকের তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক। গত সোমবার চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দুদক জানায়, ওসি প্রদীর কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে করা মামলার সত্যতা মিলেছে তদন্তে। তাদের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে অর্জিত টাকা অন্যকে হস্তান্তর করারও অভিযোগ আনা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: ইমরান খান
কার্যালয়: গ-১৩৩/৩, প্রগতি স্মরণী, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২। মোবাইল: ০১৮৫৩-৫৪৬২৫৪
প্রিয়দেশ নিউজ কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত