ভারতসহ কয়েকটি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী এপ্রিলের শুরু থেকেই এসব দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সময় ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর কংগ্রেসে দেয়া প্রথম এই ভাষণে ট্রাম্প ভারতের শুল্কের বিষয়টিও বিশেষভাবে তুলে ধরে বলেন, দেশটি ১০০ শতাংশ কর নেয়।

বুধবার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন। গত জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই কংগ্রেসে তার প্রথম ভাষণ। অভিষেকের বছর ছাড়া অন্যান্য বছরে এই ভাষণকে সাধারণত “স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন” বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। মঙ্গলবার রাতের সেই ভাষণেই ভারতসহ অন্যান্য দেশের ওপর পাল্টা আমদানি শুল্ক আদায়ের কথা ঘোষণা করেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম বলছে, কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য রাখার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দেন, পারস্পরিক শুল্ক চাপানোর নীতি থেকে বাদ পড়ছে না ভারত। এসময় পাল্টা শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণাও করেন তিনি। শুধু তাই নয়, কবে থেকে আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ হবে, সেই তারিখও জানিয়ে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ভারত ছাড়াও চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলেন মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট।

মূলত মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া প্রথম বক্তৃতায় ট্রাম্প কোন কোন বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন, সেই দিকে নজর ছিল সকলেরই। সেই মঞ্চে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য দেশ আমাদের ওপর শুল্ক চাপিয়ে আসছে, এবার আমাদের পালা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ব্রাজিল, ভারত এবং অসংখ্য অন্যান্য দেশ আমাদের ওপর যত বেশি শুল্ক আরোপ করে, আমরাও তত শুল্ক আরোপ করব।”

আর এরপরই ট্রাম্প আলাদা করে ভারতের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ভারত আমাদের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই ব্যবস্থা আমেরিকার প্রতি ন্যায্য নয়, কখনোই ছিলও না।”

ট্রাম্পের ঘোষণা, “আমরা আগামী ২ এপ্রিল থেকে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করব। আমি চেয়েছিলাম ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে। কিন্তু অনেকে ভাবতে পারেন, আমি এপ্রিল ফুল করছি। তাই ২ এপ্রিল থেকে পারস্পরিক শুল্ক চালু করব।”

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্পের একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন, আমদানি শুল্কের বিষয়ে তিনি কখনোই নমনীয় হবেন না। “টিট ফর ট্যাট” নীতি অনুসরণ করার কথাও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

তার দাবি ছিল, যে দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর যত বেশি শুল্ক চাপাবে, আমেরিকাও সেই সব দেশের পণ্যের ওপর তত পরিমাণ আমদানি শুল্ক বসাবে। সেই ঘোষণায় যে তিনি এখনও অনড় তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন ট্রাম্প। মঙ্গলবারের ভাষণে তিনি আরও বলেছেন, “কেউ শুল্কের বদলে অন্য কোনও বাধার সৃষ্টি করলে, আমরাও তাদের জন্য সেই একই কাজ করব।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়ও একই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। মোদির সঙ্গে বৈঠকেও শুল্ক বিষয়টি উঠেছিল বলে আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। মোদির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে যে তিনি আমেরিকার শুল্কনীতি সম্পর্কে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, সে কথাও জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, “তিনি এখানে এসেছিলেন। আমি বলেছি, আপনি শুল্ক ধার্য করুন বা না-করুন, আমি করবই।”

এদিন নিজের সেই কথাই রাখলেন ট্রাম্প। এদিকে ট্রাম্পের সেই শুল্ক হুঁশিয়ারির পরই তৎপর হয়েছিল মোদি সরকার। বাজেটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা হুইস্কি থেকে মোটরবাইকের মতো একগুচ্ছ পণ্যে মোদি সরকার তড়িঘড়ি করে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে।