ঠাকুরগাঁওয়ে শুক নদীর বুড়ির বাঁধে চলছে মাছ ধরা উৎসব। প্রায় দু তিন দিন ধরেই চলে এ উৎসব। আশে পাশের এলাকা ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার মানুষ আসে এ উৎসবে যোগ দিতে ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং এ দুই ইউনিয়ন মাঝে অবস্থিত শুক নদীর ওপরে নির্মিত এ বাঁধটির গেট সোমবার বিকেলে খুলে দেবার পর সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় এ মাছ ধরা উৎসব ।
মঙ্গলবার সকালে বুড়ির বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাছ ধরতে ভিড় করেছে নানা বয়সের নারী ও পুরুষ। শিশুরাও বাদ যায়নি মাছ ধরতে। কারও হাতে খেয়া জাল, কারও হাতে লাফি জাল, কারও হাতে পলো। অনেকেই কোনো সরঞ্জাম ছাড়া খালি হাতেই নেমে পড়েছেন মাছ ধরতে। সব মিলিয়ে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ বিরাজ করছে শুক নদীর তীরে।
মাছ ধরতে আসা জেলেরা বলেন, জলকপাট আগামী কয়েকদিন খোলা থাকবে। মাছ ধরাও চলবে এই কয়েকদিন। তবে প্রথম দিনেই মাছ ধরার জন্য মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি হয়। আর গত ২/৩ বছর থেকে মাছ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। রিং জাল, কারেন্ট জালের কারণে এখন দেশীয় মাছ নেই বললেই চলে। তবুও এসেছি শখের কারনে।
মাছ ধরতে আসা মধ্য বয়ষ্ক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ভোরে মাছ ধরতে এসেছি। মূলত আনন্দ-উল্লাসের জন্য প্রতিবার শখের বসে এখানে মাছ ধরতে আসি। ভোর থেকে দশ টা পর্যন্ত মাছ ধরেছি। পুটি, টেংরাসহ দেশিয় নানা ধরনের মাছ পেয়েছি।
উৎসবে অংশ নিতে আসা পার্শ্ববর্তী বিলপাড়া গ্রামের স্কুলপড়ুয়া রায়হান জানান, পলো দিয়ে মাছ ধরতে ভালো লাগে। স্কুল না গিয়ে বড়দের সঙ্গে মাছ ধরার উৎসবে যোগ দিয়েছি। বোয়াল, শোল, মৃগেল, কাতলাসহ বিভিন্ন মিঠাপানির মাছ ধরেছি।
জানাযায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য এলাকায় একটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। জলকপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে প্রতিবছর মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা অবমুক্ত হয়। আর এ পোনাগুলোর দেখভাল করে আকচা ও চিলারং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠাকুরগাঁওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ১৯৫২ সালের দিকে বুড়ি বাঁধ সেচ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। ৫০ একর এলাকাজুড়ে সুক নদীর ওপর নির্মিত বুড়ির বাঁধটির সামনে একটি মৎস অভয়াশ্রম আছে। বাঁধটির প্রতি বছর বাঁধটি ছেড়ে দেওয়ার পরে এখানে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে, যারা এখানে মাছ ধরতে আসেন। এ বাঁধে দেশীয় প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।