বিদায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ

17

বিশ্বের যেকোন জাতির জীবনে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হওয়ার কিছু মুহূর্ত থাকে। বাঙালির জীবনে এখন তেমনই এক ক্ষণ। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সম্মানের স্থানে পৌঁছে দেয়া ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা স্যার ফজলে হাসান আবেদকে হারিয়ে তেমনই শোকাহত মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।

ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলে এবং তিন নাতি-নাতনি রেখে গেছেন।

গত ২৭ নভেম্বর এ্যাপোলো হাসপাতালে রেসপেরিটরি সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তিনি ডা. চন্দ্র প্রকাশ ডকুয়ালের তত্ত্বধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন।

দেশের এই কৃতি সন্তান যদিও পরিণত বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবুও এমন ব্যক্তিত্বের চলে যাওয়া আমাদের জন্য কষ্টের। পুরো দেশের মতোই প্রিয়দেশ পরিবার তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলে হাসান আবেদ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ফেরার সময় তিনি তার লন্ডনের ফ্ল্যাটটি ৬,৮০০ পাউন্ড দামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে তিনি আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থায় চাকরি করছিলেন। তিনি চাইলেই বিদেশে আয়েশি জীবনযাপন করতে পারতেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত তৈরিসহ নানা কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

একাত্তরে ভারতে আশ্রয় নেয়া এক কোটি শরণার্থী যখন দেশে ফিরে আসতে শুরু করেন, ভারতপ্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনকল্পে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন আবেদ। মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সিলেটের সুনামগঞ্জের শাল্লা ও দিরাই অঞ্চলকে নিজের কর্মএলাকা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

১৯৭২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকেই বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাসিসটেন্স কমিটি সংক্ষেপে ‘ব্র্যাক’-এর শাল্লা প্রকল্পের প্রথম পর্বের সূচনা হয়। এটিই ব্র্যাকের আনুষ্ঠানিক জন্মদিন। এরপর নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে ব্র্যাক এবং বাংলাদেশকে তিনি বিশ্ব দরবারে নতুন এক উচ্চতায় নিয়ে যান।

এমনকি ফজলে হাসান আবেদ জীবনের শেষ বেলায়ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছেন বলে জানিয়েছেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ। তিনি বলেন: স্যার ফজলে হাসান আবেদ যখন আইসিইউতে ছিলেন তখনও তিনি তার মেয়েকে ডেকে ব্র্যাকের নতুন স্কুলগুলোকে তার্কিশ পদ্ধতিতে চালানোর কথা বলেছেন। এছাড়া সাইক্লোন বুলবুলের সময়ও খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং সহায়তা করার কথা জানিয়েছেন।

জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করা এই মহান ব্যক্তিত্বের বিদায় লগ্নে তার স্মৃতির প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।