বিএনপি বিদেশে লবিস্ট ভাড়া করেনি, বরং আওয়ামী লীগ লবিস্ট নিয়োগ করেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, শুধু এখন নয়, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাবস্থায় বিরোধী দল আওয়ামী লীগ লবিস্ট ভাড়া করেছিল। এর পেছনে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ও করেছে বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলটি।
রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ভাড়া করা নিয়ে সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বিএনপি এমন দাবি করে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, বিএনপির লবিস্ট ভাড়া করার তথ্য-প্রমাণ সরকারের কাছে আছে। তিনি চুক্তির নথিপত্রও দেখান। এই লবিস্ট নিয়োগে ৩৭ লাখ ডলার খরচ হয়েছে। এই অর্থ পাঠাতে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা তা জানতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠিও দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই বক্তব্য সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট ‘অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো’কে নিয়োগে দেওয়া হয় ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে। ২০০৫ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত এই ফার্মকে মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার দেওয়া হয়েছে।
মোশাররফ বলেন, বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনো নেয়নি, লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা বানোয়াট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির লবিস্ট ফার্ম অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো এবং ফ্রিডল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তির তথ্য প্রমাণও রয়েছে।
সরকারও এখন লবিস্ট নিয়োগ করেছে দাবি করে বিএনপি নেতা মোশাররফ বলেন, দেশবাসীর দুর্ভাগ্য যে, তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার, গুম, খুন, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে এই জুলুমবাজ অবৈধ সরকার যে অপরাধ করেছে, তা ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে লবিস্টদের নিয়োগের জন্য সেই নিপীড়িত দেশবাসীরই ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করছে। জনগণের এই অর্থ ব্যয় করে সরকার ও সরকারি দল লবিস্ট নিয়োগের নামে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে এবং তার উৎস কী? তার স্বচ্ছ তদন্ত করে তার রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।
মোশাররফের দাবি, বহু বছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে এক মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফি’তে নিয়োগ করা হয়েছিল আরেকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ফ্রিডল্যান্ডারকে।
বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘লবিস্টরা যেসব কথা বলবেন, বিএনপির নেতারা নিজেরাই তা বলে থাকেন এবং তাও গোপনে না-প্রকাশ্যে। সরকার আরও বলেছে যে, এখান থেকে কীভাবে আমরা অর্থ পাঠিয়েছি। আমরা চাই যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইনকোয়ারি করুক। তাদেরটাও ইনকোয়ারি করুক।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যেকটা দেশে দূতাবাস আছে, জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস আছে। এগুলো কীসের জন্য? বাংলাদেশের পক্ষে, বাংলাদেশের ঘটনাবলির পক্ষে ওইসব দেশকে অবহিত করা এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া। সেখানে সরকার বা সরকারি দলের কেন লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে? সেটাই প্রশ্ন। দূতাবাস থাকা সত্ত্বেও এভাবে জনগণের অর্থ খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ অনৈতিক।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
