বিএনপি-জামায়াত জোটের দ্বিতীয় দফার অবরোধ

ফাইল ছবি

সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবি, বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি-জামায়াত ও সরকারবিরোধী দলগুলোর ডাকা দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির শুরু হয়েছে। আজ রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার প্রতিবাদে আজ রোববার চট্টগ্রামে সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। বিএনপির হরতালে সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরের আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান, মহানগরের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ সমর্থনের কথা জানান।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ এলাকায় চারটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ভোলার চরফ্যাশন সদর এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আরেকটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব তথ্য ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।

এর আগে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবরের হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় গত শুক্রবার (৩ নভেম্বর) ঢাকাসহ সারা দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করেছে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো।

গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সমাবেশ পণ্ড হয় এবং ২৯ অক্টোবর সারা দেশে হরতালের ডাক দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরদিন সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর টানা আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যেই বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মির্জা আব্বাস, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক রয়েছেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, শুক্রবার বিকেল থেকে ২৪ ঘণ্টায় ১৭৬ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ৫৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ৫০৬টির বেশি, যেখানে মোট আসামি ৩৮ হাজার ৫৬০ জন। এ ছাড়া মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের এবং আহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৮০ জন নেতাকর্মী।