ঠাকুরগাঁওয়ের কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীর একমাত্র সন্তান মিরাজ আল মামুন দীর্ঘ দিন ধরে তার বাবাকে দেখতে না পেয়ে সবার কাছে একই আকুতি জানাচ্ছে: আমার বাবা কোথায়? বাবা কি আর আসবে না? আমার বাবা কেন চকলেট বিস্কুট নিয়ে আসে না? বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আমার বাবাকে আসতে বলো না। আমি বাবার কাছে যাবো।
বাবাকে কাছে না পেয়ে মাঝে মাঝেই কান্না করে এভাবেই বলতে থাকে শিশু মিরাজ আল মামুন। তার বয়স সাড়ে ৩ বছর চলছে। মা জিন্নাতুল আক্তার যেন কোন ভাবেই বোঝাতে পারছেনা তাকে। তাই শিশু সন্তানের কষ্ট সইতে না পেরে জেলার অন্যান্য গনমাধ্যমকর্মীদের কাছে জিন্নাতুল আক্তার ফোন করে শিশুটির কথাগুলোর বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, আমার স্বামী কাউকে খুন করেনি। আমার স্বামী যেমন একজন সংবাদকর্মী তেমনই এ জেলার অন্যান্য মানুষের মতই একজন নাগরিক। সে তার ফেসবুকে বলেছিল লকডাউন চলাকালে শহরে কিভাবে যাত্রী নিয়ে গাড়ি প্রবেশ করলো? আবার আরেকটি মাইক্রোবাস ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়লো? এছাড়া প্রশাসনকে তাগিদ দিতে দু-একটি কথা বেশি লিখেছে। আমিও মনে করি বাড়তি কথাগুলো তার লিখা উচিত হয়নি। আর সে কারণে গত ১৫ এপ্রিল আমার স্বামীর বিরুদ্ধে জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানায় পুলিশ বাদি হয়ে আইসিটি আইনে মামলা করেন। তখন থেকে আমার স্বামী পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ধরনের অনেক লেখাই তো ফেসবুকে পাওয়া যায়। তাদের বেশিরভাগ মানুষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
জিন্নাতুল বলেন, হয়তো আমার স্বামীর ভুলটা প্রশাসনের চোখে পড়েছে বলে ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি আমার শিশু সন্তানটির মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। শুধু বাবা বলে কাঁদছে। মামলা হওয়ার পর থেকে সে আর বাসায় ফিরেনি। কোথায় আছে কেমন আছে তাও জানি না। আমি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় এর কাছে অনুরোধ করছি, তার হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি আমার স্বামী এ ধরনের ভুল আর করবে না। তাকে এবারের মত ক্ষমা করুন। মামলাটি প্রত্যাহারের ক্ষমতা আপনাদের আছে। দয়া করে মামলাটি প্রত্যাহার করে নিন। আমার শিশু সন্তানটি সবসময় বাবা বাবা বলে চিৎকার করছে। আর কত বুঝিয়ে রাখবো তাকে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে কাউকে দেখলেই বলে এই বুঝি বাবা এসেছে। আমি আর পারছি না। বাধ্য হয়ে আপনাদের সাথে কথাগুলো বললাম। প্লিজ দেশের এ সংকট সময়ে আপনারা বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলুন ডিসি ও এসপি মহোদয়কে। তারা এ জেলার অভিভাবক কথাগুলো শুনলে হয়তো এবারের মত আমার স্বামীকে ক্ষমা করে দিবেন।
উল্লেখ্য, করোনা মোকাবেলায় আবেগে পড়ে ঠাকুরগাঁও জেলার দৈনিক অধিকার পত্রিকার সাংবাদিক আল মামুন জীবন জেলার প্রশাসনকে জড়িয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এরপর গেল ১৫ এপ্রিল রাতে জেলার বালিয়াডাঙ্গী থানায় পুলিশ বাদি হয়ে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই তিনি সাড়ে তিন বছরের সন্তান ও স্ত্রীকে ভাড়া বাসায় রেখে পালিয়ে যান। পরে ওই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের হাসানপাড়ায় তার স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে ফিরে যান তার বাবার বাসায়।