রবিউল ইসলাম খান
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের মুনছুর আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে ৮ বছরের এক ছেলে শিশুকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার নাছির মাঝি (৬০) বিরুদ্ধে। ভিকটিম ও অভিযুক্ত চর মটুয়া একই এলাকার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় শিশুটির ভাই বাদী হয়ে ৩১ আগস্ট(শনিবার) লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
জানা যায়, ঘটনার পর থেকে সেই গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত। নাছির বিএনপির রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। সেই দলীয় লোকজনকে দিয়ে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ।
এর আগে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুর সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় এনজিও সংস্থার লোকদের এলাকায় গিয়ে সত্যতা জানার নির্দেশ দেয় সেনাবাহিনী। পরে যায় জেলা এনজিও সমন্বয়কারী ও জেমসের নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী এবং স্থানীয় সাংবাদিকেরা। অভিযুক্ত নাছির মাঝি একই এলাকার, সম্পর্কে শিশুটির দাদা হয়।
মামলার বিবরণী ও এলাকাবাসী থেকে জানা যায়, ওই এলাকায় বন্যার কারণে প্রায়ই সবার বাড়ি পানি উঠে যাওয়ার কারণে বাড়ির পার্শ্বে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়। গত ৫ দিন আগে শিশুটি ওই আশ্রয় কেন্দ্রে উঠে। ঘটনার দিন গত ২৫ এবং ২৯ আগস্ট গভীর রাতে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে আশ্রয় কেন্দ্রের ওয়াশরুমে যাওয়ার পথে শিশুটিকে ফুসলিয়ে টয়লেটের এক কোণে জোরপূর্বক বলাৎকার করে। পরে এসব ঘটনা শিশুটি তার ভাইকে জানায়। এলাকায় জানাজানি হওয়ার পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয় একটি মহল। এর মাঝেই ঘটনার মূল হোতা নাছির মাঝি পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে ঘটনাকে ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত করার উদ্দেশে নাছির মাঝির ভাগিনা কবির হোসেন ভাড়াটিয়া একদল সন্ত্রাসী নিয়ে ভিকটিম পরিবারকে হুমকি ধমকি দেয় এবং বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেয়।
ভিকটিমের বড় ভাই জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে নাছির মাঝি আমার ছোট ভাইর সাথে খারাপ কাজ করেছে। আমরা এলাকায় বিচার চাইলে একটি পক্ষ মীমাংসা করার উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে নাছিরের ভাগিনা কবির বিএনপির লোকজন নিয়ে এসে আমাদের হুমকি ধমকি দেয়। আমরা গরীব মানুষ কিছু বুুঝি না।
একই বাড়ির মামুন মাঝি জানান, ভিকটিম ও অভিযুক্ত আমাদের একই বাড়ির। বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য আমি ও আমার ইউনুছ মাঝি উদ্যোগ নিই। আমি শিশুটির চিকিৎসার জন্য ১৫০০ টাকা দিয়েছি। কিন্তু তারা চিকিৎসা নেয়নি। তবে নাছির মাঝির ভাগিনা কবির বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণে সবদিকে ঘটনাটি ছড়িয়ে গেছে। এখন তারা যদি আইনের আশ্রয় নেয় সেটা তাদের ব্যাপার।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে নাছির মাঝি ও তার ভাগিনা কবিরের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নাছির মাঝি স্ত্রী নয়ন বেগম জানান, কী হয়েছে আমি জানি না। তবে গতকাল এলাকার শত শত মানুষ ভিড় করেছে বাড়ির সামনে। শুনেছি একটা ছেলের সাথে খারাপ কাজ হয়েছে। কিন্তু আমার স্বামী জড়িত কিনা আমি জানি না। ঘটনা শোনার পর থেকে তার সাথে আমরা যোগাযোগ নেই।
জেমসের নির্বাহী পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী জানান, সেনা ক্যাম্প থেকে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাই। ভিকটিম ও তার মাতাকে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। শিশুটিকে এবং তার পরিবারের আইনি পক্রিয়াসহ সব বিষয়ে আমরা সহযোগীতা করে যাবো। বিষয়টি খুবই দু:খজনক। এ ধরনের ঘটনা কাম্য হতে পারে না।
সদর থানার ইনচার্জ ইয়াছিন ফারুক মজুমদার জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।