যশোরের চৌগাছার চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র এহতেশাম মাহমুদ রাতুল হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। প্রেমের বিয়ে মেনে না নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অপমান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে শ্যালক রাতুলকে হত্যা করেছেন দুলাভাই শিশির আহমেদ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শিশিরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিশির ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের হায়দার আলী মন্ডলের ছেলে। আর নিহত রাতুল মহেশপুর থানার বাজিপোতা গ্রামের মহিউদ্দিনের একমাত্র ছেলে সন্তান।
শনিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত সোমবার (১২ জুলাই) বিকেলে যশোরের চৌগাছা লস্করপুরে পাটখেতের মধ্যে মুখে স্কচটেপ মোড়ানো যে মরদেহটি পাওয়া যায় সেটি পাশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের বাজিতপুর গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে এহতেশাম মাহমুদ রাতুলের। সে মহেশপুর সামবাজার এমপিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে কোনো ক্লু ছিল না। হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর মরদেহ পাওয়া যায়। এরপর নিহতের বাবা মহিউদ্দিন মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) চৌগাছা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি স্পর্শকাতর হাওয়ায় যশোরের পুলিশ সুপার ডিবি পুলিশের এসআই শামীম হাসানকে মামলাটির তদন্তভার দেন। শামীম হাসান তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত শিশিরকে গ্রেফতার করেন।
রাতুলের বাবা মহিউদ্দিন বলেন, শিশিরের সঙ্গে রাতুলের বড় বোন মাহমুদা মমতাজ মীমের ফেসবুকে পরিচয় হয়। আট মাস আগে তারা ঢাকায় পালিয়ে গিয়ে গোপনে বিয়ে করে। এরপর থেকেই শিশির যৌতুক দাবি করতে থাকে। কিন্তু আমরা তাকে বারবার বলি, আমরা এখনও যৌথ পরিবারে বসবাস করি। তাই তুমি নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করো। আমাদের কাছ থেকে কিছু পেতে হলে, কিছুটা সময় লাগবে। সে ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতো। কিন্তু তার লোভ ছিল খুব বেশি। বিয়ের আট মাস পর কয়েকদিন আগে সে প্রথমবারের মতো মাহমুদাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসে। কিছু কথা বলা হয় শিশিরকে।
একপর্যায়ে সে কৌশলে আমার দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে রাতুলকে রোববার বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর মঙ্গলবার ফেসবুক ও অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি রাতুলকে মুখে স্কচটেপ মুড়িয়ে চৌগাছার পাটখেতে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর ডিবি পুলিশের এসআই শামীম হাসান বলেন, হত্যা মামলায় শিশির আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শ্বশুর তাকে বাড়িতে ডেকে এনে অপমান করায় ক্ষোভে তিনি শ্বশুরের একমাত্র ছেলেকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্কচটেপ ও হ্যান্ড গ্লাভস তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। শিশির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে- প্রথমে রাতুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়। এরপর চৌগাছায় পাটখেতের ভেতরে নিয়ে কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। এরপর তার গায়ের জামা-কাপড় কেটে তার হাত-পা বাঁধা হয়। এরপর মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।