ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। নতুন করে সদর উপজেলার কাজীরবাগ, ধর্মপুর, মোটবী, ছনুয়া, ধলিয়া, ফাজিলপুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি, উপকূলীয় এলাকায় পানি বৃদ্ধি, দাগনভূঞা উপজেলার সিন্ধুরপুর, জায়লস্কর, পূর্বচন্দ্রপুরসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
জেলার অধিকাংশ এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল রযেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ দুই-তৃতীয়াংশ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে তথ্যগুলো ভুক্তভোগী, উদ্ধারকর্মী, বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বাসস’র প্রতিবেদনে বলা হয়, একাধিক ভুক্তভোগী সাহায্য চেয়ে জানান, বন্যার্ত পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া এলাকায় পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ি ঢলের স্রোত আরও তীব্রতর হয়েছে। তাদের উদ্ধারে কেউ আসছে না। গত তিনদিন যাবত কয়েকটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিস্তীর্ণ জনপদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
শহরের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের রানীর হাট মালিপুর গ্রামে মীরবাড়িতে এক স্বজনের পরিবারের ১০ সদস্য বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছিল, এখন ছাদও ডুবে গেছে। মানুষজন আটকা পড়েছে ।
ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবারের সদস্যরা জানান, খবর পেলেই উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।
গতকাল রাতে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বাসসকে জানান, পরশুরাম ফুলগাজীসহ বন্যা দুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবিসহ স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। সেনা ও কোস্টগার্ড আধুনিক বোট নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল রাত পর্যন্ত পানিতে ভেসে গিয়ে এক তরুণের মৃত্যু খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
ফেনী শহরের গ্র্যান্ড ট্রাঙ্করোড ব্যতিত সর্বত্র জলাবদ্ধ অবস্থায় রযেছে । শহরের বেশিরভাগ আবাসিক এলাকায় ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। সড়কে কোথাও কোথাও বুকসমান পানি জমেছে।
শহরের মিজান রোডের বাসিন্দা বদরুল আমিন জানান, বিদ্যুত নেই, পানি ভবনের নিচতলায় উঠে এসেছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। দোকানে শুকনো খাবার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর লালপোলে বন্যার পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন শফিক চৌধুরী নামে একজন বাসযাত্রী। ফেনী-সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কে বন্যার কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমকর্মী আবদুল হান্নান।
গতকাল রাতে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, ফেনীতে আড়াই লাখ মানুষ বন্যার কবলে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, অতি বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গত দেড় মাসে তৃতীয় দফায় ফেনীতে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত জুলাই মাসের শুরুতে এবং গত ২ আগস্ট পরশুরাম ও ফুলগাজীর একাধিক লোকালয় বন্যার কবলে পড়ে।